হাত দিয়ে হেঁটে গিনেস রেকর্ড মার্কিন অ্যাথলিটের

জন্ম থেকেই দুটি পায়ের একটিও নেই তাঁর। এভাবে কোনো যান্ত্রিক সাহায্য ছাড়া কতটুকুই বা হেঁটে যেতে পারেন মানুষ? শুধু হাতের উপর ভর দিয়ে বেশিদূর হেঁটে যাওয়া সহজ নয়। অথচ মার্কিন অ্যাথলিট জিওন ক্লার্ক (Zion Clark) এভাবেই ২০ মিটার পথ অতিক্রম করেছেন ৫ সেকেন্ডেরও কম সময়ে। আর এভাবেই চলতি সপ্তাহে তিনি জায়গা করে নিলেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। তিনি বর্তমানে সারা পৃথিবীতে হাতের উপর ভর দিয়ে হাঁটতে পারা দ্রুততম ব্যক্তি (Fastest Walker Using Hands) হিসাবে স্বীকৃত।

মাতৃগর্ভেই কডাল রিগ্রেসন সিন্ড্রোম নামক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্লার্ক। ফলে তাঁর দুটি পা এবং মেরুদণ্ডের বেশ খানিকটা অংশ গড়ে ওঠেনি। এমন প্রতিবন্ধকতাযুক্ত সন্তানকে স্বীকার করতে রাজি হননি বাবা-মাও। ক্লার্ক বেড়ে উঠেছেন আমেরিকার ফস্টার কেয়ার সিস্টেমের আওতায়। সেখানেই সবসময় অবহেলা আর নির্যাতন লেগেই থাকত। স্কুলে সহপাঠীদের কাছেও বারবার বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন ক্লার্ক। কিন্তু জীবনের যুদ্ধে হেরে যেতে শেখেননি তিনি। আজও তিনি বিশ্বাস করেন, হেরে যাওয়ার কোনো ক্ষমা নেই। স্কুলজীবন থেকেই নানারকম খেলাধুলোয় ঝোঁক ছিল তাঁর। স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর কুস্তিতে নামতেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই বেশিরভাগ সময় জয়ীও হতেন তিনি। আর হাতের উপর ভর দিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে যাওয়ার অনুশীলনও শুরু করেছিলেন স্কুলেই।

ফস্টার কেয়ার সিস্টেম থেকেও একদিন বিদায় নিতে হতই সময়ের নিয়মে। তবে তার আগেই কিম্বারলি হকিন্স নামের এক মহিলা দত্তক নেন ক্লার্ককে। তাঁর স্নেহে নতুন করে জীবনের মানে খুঁজে পান তিনি। হকিন্সই তাঁকে শিখিয়েছেন, কারোর না পারা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে নেই। বরং সবসময় ভাবতে হয়, আমি কী পারি। এটা শুধু প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের জন্য নয়। প্রত্যেকের জন্যই সত্যি। হকিন্সের শিক্ষাকে সামনে নিয়ে নিজেকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে থাকেন সেইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে এবং অসংখ্য বইয়ের ভিতর দিয়ে আরও বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন তিনি। বর্তমানে তিনি আমেরিকার একজন প্রথম সারির অ্যাথলিট। গত জানুয়ারিতেই ৪.৭৮ সেকেন্ডের মধ্যে ২০ মিটার হেঁটে গিয়েছেন তিনি। তবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের প্রশাসনিক কাজ শেষ করতে একটু বেশিই সময় লেগে গিয়েছে। চলতি সপ্তাহে তাঁর সেই রেকর্ডের স্বীকৃতি পেলেন ক্লার্ক।

গিনেস বুকে নাম তোলার পর এখন ক্লার্কের লক্ষ আসন্ন অলিম্পিকে অংশ নেওয়া। শুধুই প্যারালিম্পিক নয়, অলিম্পিকেও কুস্তিতে অংশ নিতে চান তিনি। আর প্যারালিম্পিক হুইল-চেয়ার রেসে দৌড়ানোর লক্ষ তো রয়েছেই। হয়তো তিনিই আমেরিকার প্রথম অ্যাথলিট হতে চলেছেন, যিনি অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক দুটোতেই অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন
বেলুন চড়েই মহাকাশযাত্রা, মার্কিন প্রযুক্তির কাছে হার মানবে জুল ভার্নের গল্পও

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বিশ্বের কনিষ্ঠতম প্রোগ্রামার, ৬ বছর বয়সেই গিনেস বুকে আমেদাবাদের খুদে

More From Author See More