সেনা অভ্যুত্থানের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ মাস। তবে মায়ানমারে এখনও উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে সহিংসতা। আর এবার এই রক্তক্ষয়ী হিংসার নিষ্পত্তি করতেই এবার গুরুতর পদক্ষেপ নিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। মায়ানমারকে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করার ওপরে যাতে নিষেধাজ্ঞা লাগু করে সমস্ত দেশ, এবার সেই আহ্বানই জানাল জাতিসংঘ। আর এই সিদ্ধান্তকেই যে অত্যন্ত কার্যকরী হতে চলেছে আগামীদিনে, তেমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিবিদরা।
গতকাল ভোটের মাধ্যমে গঠনমূলক আলোচনার মধ্যে দিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় সায় দিয়েছে ১১৯টি দেশ। একমাত্র এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে আরেক স্বৈরাচারী রাষ্ট্র বেলারুশ। তবে চিন এবং রাশিয়া-সহ ৩৬টি দেশ এই বিষয়ে কোনোরকম মতামত জানানো বিরত রেখেছে নিজেদের। মায়ানমারকে মূলত সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে চিন এবং রাশিয়া। ফলে বাণিজ্যিকক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যে এমন অবস্থান দুই শক্তিধর দেশের— তা কার্যত স্পষ্ট।
তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিষদ-কর্তৃক পাশ হওয়া এই প্রস্তাব যে একেবারেই বাধ্যতামূলক, তেমনটা নয়। অর্থাৎ, এই সিদ্ধান্ত কোনো স্থায়ী আইন নয়। ফলে, চাইলে যে কোনো দেশই আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করতে পারে মায়ানমারকে। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দেশেরই বিরুদ্ধাবস্থান, কার্যকরী করে তুলবে এই প্রস্তাবকে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপের কারণে অস্ত্র বিক্রির সাহস দেখাবে না নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলিও। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
ফেব্রুয়ারির পর থেকে এখনও পর্যন্ত সেনা অভ্যুত্থানের কারণে মায়ানমারে প্রাণ গেছে সাড়ে আটশোর বেশি নাগরিকের। বন্দি হয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ। তবুও থামছে না স্বৈরাচারী শাসকের নির্মমতা। সেখানে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত জরুরি ছিল বলেই মনে করছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ওলফ স্কুগ। সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার সীমিত করে দেওয়া হলে, ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন হবে জুন্টা শাসক, সে বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
আরও পড়ুন
সেনাবাহিনীর আক্রমণে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ, গণমৃত্যুর প্রহর গুনছে মায়ানমার
তবে শুধু আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞাই নয়; মায়ানমারে গণতন্ত্র ফেরানোর পক্ষেও সওয়াল হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। মায়ানমারের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান সু কি এখনও বন্দি। আদালতে তাঁর বিচার প্রক্রিয়া চললেও, প্রকাশ্যে আসেনি সেই ট্রায়াল। সেই প্রক্রিয়ায় যাতে স্বচ্ছতা থাকে সেই ব্যাপারেও সরব হয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে জাতিসংঘের এই বিবৃতিকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানিয়েছে ভারতও। এখন দেখার ক্রমাগত বাড়তে থাকা আন্তর্জাতিক চাপ বর্মার জরুরি অবস্থার অবসান ঘটাতে পারে কিনা…
আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের খবর তুলে ধরায় জেল মায়ানমারের সাংবাদিকের
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়; হাতে বন্দুক তুলে নিলেন মায়ানমারের ‘বিউটি কুইন’