আরও এক নির্মম ঘটনার সাক্ষী থাকল করোনার দিনগুলি। গঙ্গার জলে পাঁচ সন্তানকে বিসর্জন দিলেন মা। দীর্ঘ লকডাউনের জেরে রোজগারের সমস্ত রাস্তা বন্ধ। ঘরে খাবার নেই একফোঁটা। খাবার সংগ্রহের মতো আর্থিক সঙ্গতিও নেই। চোখের সামনে সন্তানদের অনাহারে মরতে দেখা ছাড়া আর উপায় ছিল না। তাই অসহায় মা শেষপর্যন্ত নিজের হাতেই তাদের বিসর্জন দিলেন নদীর জলে।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের জাহাঙ্গিরাবাদ গ্রামে। নদীর জলে পরপর পাঁচটি শিশুকে ডুবে যেতে দেখে সাময়িকভাবে ভয় পান মাঝিমাল্লারা। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ঘটনাটি জানান। কালবিলম্ব না করে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ। শিশুদের উদ্ধার করতে জলে নেমেছে ডুবুরিরা। আর মঞ্জু যাদব নামের মহিলাকে আপাতত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মানসিকভাবে চূড়ান্ত বিপর্যস্ত অবস্থাতেই আছেন মঞ্জু যাদব। ঘটনার ভয়াবহতা স্পর্শ করে গিয়েছে তাঁকেও। নিজের হাতে সন্তানদের মেরে ফেলার মতো ঘটনায় কোন মা অবিচল থাকতে পারেন? করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে লকডাউনকেই বেছে নিয়েছে বেশিরভাগ দেশ। ভারতেও তিন সপ্তাহের লকডাউনের পর আবার সেই সময়কাল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আর উপায়ও তো নেই। কিন্তু এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দিনমজুর এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দিনমজুরদের ৯২.৫ শতাংশেরই উপার্জনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে ঠিকই। কিন্তু সেই সাহায্য আর কতটুকু? ক্রমশ দারিদ্র্য আর অনাহার গ্রাস করছে সমস্ত দেশটাকে। করোনা ভাইরাসের সঙ্গেই যেন আরেক মহামারীর সৃষ্টি করেছে লকডাউন।
মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে একসময় হয়তো আর কোনো মানবিক গুণই আর অবশিষ্ট থাকে না। মঞ্জু যাদবের অবস্থাও যেন সেইরকম। যে সন্তানদের তিনি জন্ম দিয়েছেন, এতদিন ধরে একটু একটু করে বড়ো করে তুলেছেন; আজ নিজের হাতেই তাদের মৃত্যুও ডেকে আনলেন তিনি। নাকি সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাই দায়ী এই মৃত্যুর জন্য? ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি কি সরকারের উচিত নয় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি একটু সচেতন হওয়া? উঠছে সেই প্রশ্নও।