রাস্তার ধারেই ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ভেতরে গ্রাহকদের জন্য বসার ব্যবস্থা। তবে আর পাঁচটা দোকানের মতো প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল নয়। বরং, ইট এবং বাঁশ দিয়েই তৈরি সে-সব। সঙ্গে দোকানের সামনেই ঝুলছে মস্ত বড়ো এক পিচবোর্ডের পোস্টার। তাতে লেখা— ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক লাইয়ে অওর এক পওধা মুফত পাইয়ে’। অর্থাৎ, একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক আবর্জনা নিয়ে এলেই বিনামূল্যে উপহার মিলবে একটি গাছের চারা।
উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বিশালপুর (Bisalpur) শহর। সেখানে গিয়ে যে-কাউকে ‘কানারাম মেওয়াদা’-র (Kanaram Mewada) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেই হদিশ মিলবে এই ছোট্ট দোকানটির। স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই, বর্তমানে পর্যটকদের কাছে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কানারামের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। গাছের চারা উপহার পেতেই প্রতিদিন প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে তাঁর দোকানে হাজির হয় গ্রামের শিশুরা। পাশাপাশি পর্যটকরাও নিজেদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক আবর্জনা রেখে যান তাঁর এই দোকানে।
বছর দুয়েক আগের কথা। লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব। বাধ্য হয়েই সে-সময় দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল কানারামকেও। বাড়িতে অবসর সময়ে ইন্টারনেটে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সংবাদ পড়তেন তিনি। এমনই এক প্রতিবেদনে, তিনি জানতে পারেন, ভারতে বার্ষিক প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন। অথচ, সেগুলি প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয় না এ-দেশে। তার একটা কারণ যেমন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণকেন্দ্রের অভাব, তেমনই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী সাধারণ মানুষও। তাঁরাও যত্রতত্র ফেলে দেন প্লাস্টিক বর্জ্য। এমনটা চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছরে গোটা দেশটাই হয়ে উঠবে আবর্জনার স্তূপ।
এই ঘটনাই গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল তাঁর মনে। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর, তিনি নিজেই উদ্যোগ নেন প্লাস্টিক অপসারণের। প্রাথমিকভাবে নিজেই সংগ্রহ করতেন ক্রেতাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক। তাঁদের বোঝাতেনও। তবে তাতে লাভ হয়নি খুব একটা। তারপরই তাঁর মাথায় খেলে যায় উপহার প্রদানের ফন্দি। প্লাস্টিক জমা দিলে মাস পিছু কিছু পরিমাণ চিনি দেওয়া শুরু করেন কানারাম। পরবর্তীতে এই প্রকল্প বদলে যায় আরও খানিকটা। চিনির বদলে বর্তমানে গাছের চারাই উপহার দেন তিনি। বিশ্বাস, তাতে দু’ভাবে বাঁচবে প্রকৃতি।
আর সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য? সারা মাস ধরে দোকান সংলগ্ন একটি ঘরে এইসব আবর্জনা জমা করেন কানারাম। মাস ফুরলে গাড়ির বন্দোবস্ত করে সেগুলি পৌঁছে দেন নিকটবর্তী বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে তাঁর সংগ্রহের পরিমাণ কম করে হলেও প্রায় ৫০ কেজি! কানারামের কথায়, তাঁর এই উদ্যোগ হয়তো সেভাবে কোনো প্রভাবই ফেলবে না প্রকৃতিতে, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বার্তা পৌঁছে দিতেই এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বৃহত্তর পরিসরে সচেতনতা গড়ে উঠলেই আসবে সাফল্য। সামান্য চা-বিক্রেতার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাতে হয় বৈকি…
Powered by Froala Editor