সন্ধেবেলায় নদীর জলে সাঁতার কাটছেন দুজন। একজন মানুষ। অন্যজনের জলেই বাস। সে একটি কুমির। যার নাম পোচো। মানুষটির সঙ্গে দিব্যি খেলা করছে পোচো। মাঝে মাঝে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরছে, চুমু খাচ্ছে। সত্যিই অবাক করা এক দৃশ্য। তবে এখন আর তা দেখা যাবে না। প্রায় ১০ বছর আগেই মারা গিয়েছে পোচো। তবে মৎসজীবী চিটো সেডেনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আজও এক কিংবদন্তি।
ঘটনাটা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। কোস্টা-রিকার এক মৎসজীবী তথা টুরিস্ট গাইড চিটো সেডেন সেদিন নৌকো নিয়ে বেরিয়েছিলেন রেভেন্টাজোন নদীতে। হঠাৎ নদীর পারের কাছে দেখলেন একটি মরণাপন্ন কুমির পড়ে রয়েছে। তার কপাল থেকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। হয়তো স্থানীয় গরুপালকরা গুলি করেছে কুমিরটিকে। বাঁ চোখ থেকে মস্তিষ্কে প্রবেশ করেছে সেই গুলি। চিটো সেই কুমিরকে সঙ্গে করে ঘরে নিয়ে এলেন। তাঁর ঘরের সামনেই তৈরি করলেন একটি ছোটো জলাশয়। তারপর শুরু হল চিকিৎসা। একটু একটু করে সেরে উঠতে থাকল কুমিরটি।
দেখতে দেখতে চিটোর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল তার। চিটোও নতুন বন্ধুটিকে ভালোবেসে ফেলেছেন ততদিনে। তাঁর স্ত্রী-কন্যাদের মতোই কুমিরটিকেও পরিবারের অংশ বলে মনে করতে শুরু করেছেন। বন্ধুর একটি নামও রেখেছেন তিনি। পোচো। এই নামে ডাকলে সে সাড়াও দেয়। কিন্তু যতই হোক, কুমির যে নদী ছাড়া বাঁচতে পারে না। সেটা বুঝেছিলেন চিটো। তাই একদিন তাকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে এলেন সেই রেভেন্টাজোন নদীর জলে। কিন্তু অবাক হলেন চিটো। কারণ পরের দিন সকালেই চিটো দেখলেন সেই কুমির আবারও এসে বসেছে তার বাড়ির উঠোনে। চিটো বুঝলেন, পোচোও তার বন্ধুকে ছাড়া আর থাকতে পারবে না। তাই আর রেভেন্টাজোন নদী অবধি না গিয়ে তাকে রাখলেন বাড়ির পাশের একটি ছোটো নদীতে। আর যখনই সময় পেতেন, বন্ধুর সঙ্গে খেলা করতে নেমে পড়তেন নদীতে।
মানুষ-কুমিরের এই বন্ধুত্ব টিকে ছিল ২০ বছরেরও বেশি সময়। ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর মৃত্যু হয় পোচোর। সেদিন রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন চিটো। তবে বন্ধুর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করেছিলেন একটি অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানেরও। সারা গ্রামের লোক সেই অনুষ্ঠানে সামিল হয়েছিলেন। মৃত বন্ধুকে নিজের বাড়ির পাশেই কবর দিয়েছেন চিটো। আজও তাই তাঁর মনে হয়, পোচো যেন তাঁর সঙ্গেই আছে। শুধু নদীতে একসঙ্গে সাঁতার কাটা আর হয় না। পোচো এসে সময়ে অসময়ে চুমু খায় না চিটোকে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এমন একটা বন্ধুত্বের গল্প সত্যিই অবাক করার মতো।
আরও পড়ুন
স্বর্ণপদক ভাগ করে নিলেন দুই প্রতিযোগী, বিরল বন্ধুত্বের সাক্ষী অলিম্পিকের মঞ্চ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বন্ধুত্বে বাধা নয় দূরত্ব – চেন্নাইয়ের কাছিম ও এক প্রবাসী ভারতীয়ের সম্পর্কের গল্প