হাতিয়ার ব্যাঙ্গাত্মক ‘মিম’, প্রতিবাদের নতুন ভাষা চেনাল তরুণ প্রজন্ম

কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইন ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে উত্তাল গোটা দেশ। কয়েক মাস আগেই আসামে এনআরসির কবলে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। আর এখন নয়া সংযোজন এই আইন। স্বাভাবিকভাবেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ সহ বিভিন্ন শহরের মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। আর এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের হয়ে উঠেছে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টারও। গোটা দেশ জুড়ে পাল্টাচ্ছে প্রতিবাদের ধরণ। শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিভিন্ন ব্যঙ্গাত্মক প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, কার্ডবোর্ড নিয়ে মিছিলে তাল মিলিয়েছেন ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। যেসব ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টার এতদিন সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল, এই আন্দোলনে তা নেমেছে পথেও।

হিংসা নয়, বরং গান্ধীর অহিংস নীতিকে মাথায় রেখেই তরুণ তরুণীরা মিছিলে হেঁটেছেন কলকাতা শহরের বুক জুড়ে। একই ছবি দিল্লি অথবা মুম্বাইতেও। গলায় ঝুলছে ব্যাঙ্গাত্মক, কৌতুকে ভরা পোস্টার। দিল্লির এক ছাত্রীর প্রতিবাদের ভাষা ছিল এমন – ‘আমার বাবা জানেন যে আমি ইতিহাস পড়ছি, কিন্তু আমি আসলে ইতিহাস তৈরি করছি।’ ভারতীয় পতাকাকে পাশে রেখেই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি একরাশ ধিক্কার ছুঁড়ে দিয়েছে এই প্রতিবাদ।
কলকাতায় শহীদ মিনারের তলায় হলুদ পাতার ওপর একদল ছেলে মেয়ে লিখছে, ‘মাদার, শ্যুড আই ট্রাস্ট মাই গভর্নমেন্ট?’ অথবা, প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রির সঙ্গেই হারিয়ে গেছে আমজনতার নাগরিকত্বের নথিপত্র - এমন ব্যাঙ্গও উঠে এসেছে নানা পোস্টারে। রাষ্ট্রকে কৌতুক করে এই যে প্রতিবাদের ধরণ একেবারে নতুন, আর তাতেই মজেছে এখনকার তরুণ তরুণীরা।

উঠে এসেছে কার্টুনের মাধ্যমে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যাঙ্গ করার ছবিও। ক্রিয়েটিভ আর্টকে প্রতিবাদের হাতিয়ার করে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন পড়ুয়ারা। রাজনৈতিক প্রতিবাদে পোস্টার লেখা বহুদিন ধরে হয়ে এলেও, এ-ধরণের পোস্টার খুব বেশি চোখে পড়েনি। তবে এ ছবি কেবল দেশেই নয়, একইভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশেও। বার্লিনের রাস্তা দিয়ে একদল ভারতীয় এমনই প্ল্যাকার্ড বা পোস্টার দিয়ে মিছিল করেছেন। ছবি এঁকে রীতিমতো ব্যাঙ্গ করে প্রতিবাদ করেছেন সেখানকার ভারতীয়রা। এমনকি, কলকাতার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস্টবিনও মুড়ে ফেলা হয়েছে পোস্টারে, আর তাতে সরকারের প্রতি ছুঁড়ে দেওয়া হএয়ছে ব্যাঙ্গও।

দীর্ঘদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘মিম’ বিষয়টি খুব জনপ্রিয়। সেই মিমকেও কার্যত প্রতিবাদের ভাষা করে তুললেন একদল ছাত্রছাত্রী। আর এই ধরণের সৃজনশীল কাজে যে যথেষ্ট মেধার প্রয়োজন তা সকলেই জানেন। স্যোশাল মিডিয়া থেকে একরকম উঠে আসা এই ভাষা আধুনিক প্রজন্মের হাতিয়ার। তাই কেবল মুখেই নয়, নীরব পোস্টারও বহন করছে প্রতিবাদের বার্তা। যার সাক্ষী রইল ডিসেম্বরের ভারতবর্ষ…