পেরিয়ে গেল আরও একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কেউ হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় মোবাইল কি-প্যাডে টাইপ করে ফেললেন দু’লাইন। কেউ বা নিজের মাতৃভাষায় গেয়ে ফেললেন গান। বাস্তবিক পরিস্থিতিই বা কী? বছরের বাকি দিনগুলিতে কী সমানভাবেই চর্চা হয় মাতৃভাষার? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান দিল ইউনেস্কো।
জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান অড্রে অ্যাজোলে ভাষা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে জানালেন, বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষই শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ পান না। অর্থাৎ যার সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩১০ কোটিতে। কিন্তু এখানেই কি শেষ? মাতৃভাষার বিকাশের সুযোগ না থাকায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষাভাবে ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিতেও প্রভাব পড়ে বলেই জানান তিনি।
শুধু শিক্ষার্থীদের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে বাস্তব পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি ছাত্রছাত্রী তাদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পান না। সেইসঙ্গে সুযোগ থাকার পরেও মাতৃভাষা ছেড়ে অন্য কোন ভাষায় পঠনপাঠনের ঘটনা তো রয়েছেই। এই প্রসঙ্গেই তিনি বার্তা দেন, সকলকে সচেতনভাবেই এগিয়ে আসতে হবে মাতৃভাষার ব্যবহারে।
এই বছরের বিষয়বস্তু ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দৈনন্দিন জীবনে বহুভাষিকতার প্রয়োগ। বহুভাষা অর্থে ইউনেস্কোর মূল উদ্যোগই হল শিক্ষার ক্ষেত্রে যেন বাধ্যতামূলক করা হয় মাতৃভাষাকে। শ্রেণিকক্ষ এবং সমাজ— উভয় জায়গাতেই যেন ন্যূনতম মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ পান সকলে, সেটাই ছিল লক্ষ্য।
আরও পড়ুন
শব্দ নয়, শিস দিয়েই ভাব বিনিময় করেন তাঁরা; অবলুপ্তির পথে তুরস্কের ‘পাখি ভাষা’
কিন্তু এই একদিনের উদযাপন কি সত্যিই বদল আনবে কিছু? ইউনেস্কোর এই উদ্যোগের পরে কতটা সচেতনতা গড়ে উঠবে মানুষের মধ্যে? যদি প্রতিটি দেশের প্রশাসন নিজেরা না এগিয়ে আসে এই দায়িত্ব পালনে, বৃহত্তর একটি পরিকাঠামো তৈরির কাজে— তবে কোনো পরিবর্তনই হবে না পরিস্থিতির। শুধু নীরবেই বিশ্বব্যপী ভাষার তালিকা থেকে কমতে থাকবে সংখ্যা। দুঃখপ্রকাশ ছাড়া আর সত্যিই কি কিছু করার আছে তখন? সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত ৬ হাজার ভাষা। যার মধ্যে ৪৩ শতাংশই অবলুপ্তির দোরগোড়ায়। এখন দেখার, এইসব সংস্কৃতির সংরক্ষণে জাতিসংঘের পাশাপাশি কতটা সজাগ হয়ে উঠতে পারে প্রতিটা দেশের প্রশাসন…
আরও পড়ুন
খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বিলুপ্তির মুখে এই ১০টি ভাষা, দায়ী বাংলার আধিপত্য
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রাতিষ্ঠানিক বাংলার ‘আস্ফালন’, কোণঠাসা পশ্চিমবঙ্গের মৌখিক ভাষাবৈচিত্র্যও?