পরনে ওয়াটার ডাইভিংয়ের শ্যুট। পিঠে অক্সিজেনের সিলিন্ডার। এমন বেশে সমুদ্রের তলদেশ অভিযানে চলেছেন একদল মানুষ। না, শখের স্কুবা ডাইভার নন তাঁরা কেউ-ই। বরং, এই সমুদ্র অভিযানের উদ্দেশ্য সমুদ্রের তলদেশে বৃক্ষরোপণ করা। সমাজকর্মী নন, তাঁরা প্রত্যেকেই খ্যাতনামা বিজ্ঞানী। সমুদ্রের তলদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফেরাতে, বাস্তুতন্ত্র বাঁচাতে, এখন তাঁরাই কাজ নিয়েছেন মালির।
সমুদ্র ঘাস বা সিগ্রাস সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম ধারক। আন্টার্কটিকা বাদ দিলে বিশ্বের সমস্ত সমুদ্র এবং মহাসাগরেই দেখা মেলে এই জলজ উদ্ভিদের। তবে বিগত কয়েক দশকে আশঙ্কাজনকভাবেই তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে ওয়েলসের ডেল-বে উপসাগর থেকে। সমীক্ষায় উঠে আসে ১৯৩৬ সাল থেকে প্রায় ৪৪ শতাংশ কমেছে জলজ তৃণভূমির পরিমাণ। আশির দশকের পর কমেছে ৩৬ শতাংশ! অর্থাৎ, ক্রমশ দ্রুত গতিতেই ব্রিটেন থেকে অবলুপ্ত হচ্ছে জোস্টেরা মেরিনা নামের স্থানীয় সিগ্রাসের প্রজাতিটি। আর তার স্পষ্ট ছাপ পড়ছে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রেও। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০ শতাংশ সামুদ্রিক প্রাণীজগৎ।
হিসাব বলছে, ব্রিটেনের এই সমুদ্র ঘাসই ৪০ কোটি মাছের আবাসস্থল। তবে শুধু সামুদ্রিক প্রাণীই নয়, সেইসঙ্গে সমুদ্র তীরবর্তী উভচর এবং সরীসৃপদের প্রজননেও ভূমিকা রয়েছে সিগ্রাসের। পাশাপাশি বছরে প্রায় ১.১৫ কোটি মেট্রিক টন কার্বন শোষণ করে এই সামুদ্রিক উদ্ভিদ। যা সমপরিমাণ অরণ্যের প্রায় ৪০ গুণ। ফলত, তাদের বিলুপ্তি যে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে গোটা পরিবেশকে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কোনো। ২০১৪ সালে এই প্রজাতিটির সংরক্ষণের জন্যই বিশেষ কর্মসূচি নেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা।
তার মাস খানেকের মধ্যেই শুরু হয়েছিল এই রোপণ কর্মসূচি। কৃত্রিমভাবে ল্যাবরেটরিতে সিগ্রাসের চারার উৎপাদন করে তা ধারাবাহিকভাবে বসানো হত ডেল-বে’তে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীদের এই পাইলট প্রোজেক্ট প্রাথমিকভাবে সফল হওয়ার পর, বৃহত্তর কর্মসূচি নেওয়া হয় তার বছর দুয়েকের মধ্যেই। লক্ষ্য ছিল ২০০ হেক্টর জমিতে এই গাছের চারা ছড়িয়ে দেওয়া। আর সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন খোদ বিজ্ঞানীরাই।
আরও পড়ুন
প্লাস্টিককে ঘিরেই গড়ে উঠছে নয়া বাস্তুতন্ত্র, সমুদ্রের ‘অজানা’ গল্প
‘প্রোজেক্ট সিগ্রাস’-এর পাঁচ বছরের ফলাফল রীতিমতো চমকে দিয়েছে গবেষকদের। রোপণ ছাড়াও সংরক্ষণ কর্মসূচির জন্য দ্রুত বংশবিস্তারে ২০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ওয়েলসের সি-গ্রাসের পরিমাণ। ফিরে এসেছে বহু সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিও। ‘প্রোজেক্ট সিগ্রাস’-এর ডিরেক্টর রিচার্ড লিলি জানাচ্ছেন, লক্ষ্য পূরণ হলেও এখানেই থেমে থাকবেন না তাঁরা। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অন্যান্য সামুদ্রিক অঞ্চলেও চলবে রোপণ কর্মসূচি। লিলি আশাবাদী এই একইভাবে ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণ শুরু হলে একেবারেই বদলে যাবে পৃথিবীর চরিত্র। এতে কোনো সন্দেহ নেই যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের এই প্রকল্পই আগামীদিনে মডেল হয়ে উঠতে চলেছে গোটা বিশ্বের…
আরও পড়ুন
বারবার ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত বাংলা, সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধিই একমাত্র কারণ?
Powered by Froala Editor