Powered by Froala Editor
জলের নিচেই বেড়ে উঠেছে যে-সমস্ত অরণ্য
১/৯
জঙ্গল বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিরাট অঞ্চলজুড়ে অসংখ্য গাছ। কিন্তু গাছ কি শুধু মাটির উপরেই জন্মায়? পৃথিবীতে জলের নিচে জঙ্গলের (Underwater Forest) সংখ্যাও কিন্তু নেহাৎ কম নয়। প্রতিবছর সেইসব জঙ্গলেও ভিড় জমান বহু পর্যটক। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। তাই জেনে নেওয়া যাক এমনই কয়েকটি জলমগ্ন অরণ্যের কথা।
২/৯
ক্লিয়ার লেক ফরেস্ট, ওরেগন – আমেরিকার ওরেগন স্টেটে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন জলমগ্ন অরণ্য। ভূতাত্ত্বিকদের মতে এর বয়স নয় নয় করে ৭ হাজার বছর। সেই সময় আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে লাগা উদ্গীরন ছিল নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা। আর তার ফলেই এই হ্রদের জন্ম হয়। তবে তারপরেও এই অঞ্চলের গাছগুলো বেঁচে থাকে। এমনকি তাদের বংশবিস্তারও ঘটতে থাকে। আজও হ্রদের উপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক হাজার গাছ।
৩/৯
কাড্ডো লেক, টেক্সাস – এই অরণ্যটিও রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই। টেক্সাস এবং লুইসিয়ানা সীমান্তে অবস্থিত কাড্ডো লেক পৃথিবীর বৃহত্তম সাইপ্রাস অরণ্য। প্রায় এক হাজার বছর আগে লোহিত নদীতে বন্যার ফলে কাড্ডো লেকের জন্ম হয়। তবে এখানে সাইপ্রাস গাছ পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গেও দিব্যি মানিয়ে নেয়। এমনকি জলমগ্ন অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের মতোই এখানেও শ্বাসমূল দেখা যায়।
৪/৯
লেক পেরিয়ার, ভারত – এটি কিন্তু মোটেও প্রকৃতিসৃষ্ট অরণ্য নয়। ১৯৮৫ সালে মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ তৈরির সময় এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। সেই সময়েই বন্যার জল জমে তৈরি হয় পেরিয়ার লেক। তবে এখানে গাছেরা বাঁচতে পারেনি। আশেপাশে অসংখ্য সবুজ গাছের মাঝে হ্রদজুড়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মৃত উদ্ভিদের কাণ্ড।
৫/৯
কাইন্ডি লেক, কাজাকিস্তান – কাজাকিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে মাটি থেকে ৬৬০০ ফুট উঁচুতে কাইন্ডি লেক। ১৯১১ সালে ভূমিকম্পের কারণে জন্ম হয় এই হ্রদের। এখানেও হ্রদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যাবে অসংখ্য মৃত কাণ্ড মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও সবুজের কোনো চিহ্ন নেই। অথচ জলের নিচের দৃশ্যটা সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে শ্যাওলা আর লিচেনের মধ্যে ডালপালা বিস্তার করেছে গাছগুলি। জলের নিচে এমন অরণ্য দেখতে ডাইভেও নামেন বহু মানুষ।
৬/৯
লেক ভোলটা, ঘানা – ঘানার লেক ভোলটা পৃথিবীর বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদগুলির একটি। ১৯৬৫ সালে তৈরি হয় এই জলাধারটি। যার আয়তন ৩২৭৫ বর্গফুট। হ্রদটি তৈরির সময় অন্তত ৭৮ হাজার মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ভাঙা হয়েছিল ১২০টির উপর বড়ো অট্টালিকা। কিন্তু বিরাট এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হার্ডউড গাছগুলির কথা কেউ ভাবেননি। আজও জলের নিচেই বেঁচে আছে তারা। তবে নতুন করে বংশবিস্তার করতে পারেনি গাছগুলি। ফলে এই অরণ্য আর বেশিদিন দেখা যাবে না।
৭/৯
ডগারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন – নরওয়ে সীমান্তের কাছে এই হ্রদটি তৈরি হয়েছে আনুমানিক ৬৩০০ বছর আগে। সেই সময় সুনামির কারণেই সমুদ্রের জল প্রবেশ করেছিল বলে অনুমান ভূতাত্ত্বিকদের। তবে তার আগেই এখানে ছিল গভীর অরণ্য। আজও জলের মধ্যে বেঁচে আছে সেই অরণ্য। বিশ শতকের শেষের দিকে একদল মৎস্যজীবি আবিষ্কার করেন এই হ্রদ।
৮/৯
লেক বেজিড, রোমানিয়া – এটিও কৃত্রিম জলাধার। ১৯৮৮ সালে এই হ্রদ তৈরির সময় প্রবল বিতর্কও হয়। বহু মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু জলের নিচে চাপা পড়ে যায় আস্ত অরণ্য। এমনকি হ্রদের মাঝখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি গির্জার চূড়াও। প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় জমান এই হ্রদে।
৯/৯
গ্রেট আফ্রিকান সি-ফরেস্ট, দক্ষিণ আফ্রিকা – কেপ টাউন থেকে নামিবিয়া সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মাইল দীর্ঘ এই জলাশয়। একসময় সমুদ্রের অংশ ছিল এই অঞ্চল, এমনটাই বলছেন ভূতাত্ত্বিকরা। তবে এই জলমগ্ন অরণ্য কতটা প্রাচীন, তা আন্দাজ করা কঠিন। মূলত সামুদ্রিক উদ্ভিদই বিবর্তিত হয়ে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে বেশ কিছু এমন উদ্ভিদও রয়েছে, স্থলভাগেই যাদের দেখা মেলে। প্রাণী ও উদ্ভিদ মিলিয়ে মোট ১৪ হাজার প্রজাতির বাস এখানে।