২০১৪ সাল। দ্বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল ইয়েমেন (Yemen)। গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল মনসুর হাডি সরকার এবং সশস্ত্র সংগঠন হাউথির মধ্যে। সাত বছর পেরিয়ে এসে যে গৃহযুদ্ধ চলছে এখনও। সেইসঙ্গে যুদ্ধ লেগেই রয়েছে সৌদি আরবের সঙ্গে। ফলত, সামরিক ক্ষেত্রেই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে চলেছে ইয়েমেন সরকার। অন্যদিকে ভয়াবহ খাদ্য সংকটের শিকার লক্ষ লক্ষ মানুষ। জরুরি তৎপরতায় পদক্ষেপ নেওয়া না হলে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষকে গ্রাস করবে দুর্ভিক্ষ (Famine)। সম্প্রতি এমনটাই হুঁশিয়ারি দিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য সংস্থার প্রধান ডেভিড বেসলি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে সাধারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য রেশনের ব্যবস্থা করে আসছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আমেরিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেনের মতো প্রথম বিশ্বের দেশগুলিই সেই তহবিলের ভারবহন করে। চলতি বছরের শুরুর দিকেই খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় টান পড়েছিল সেই তহবিলে। মহামারীর কারণে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোও ধাক্কা খাওয়ায় এক লাফে বৃদ্ধি পেয়েছিল দারিদ্রের মাত্রাও। আমেরিকা, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দেশ সে-সময় এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু কয়েক মাস পেরতেই ফের অর্থাভাবের মুখে রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য কর্মসূচি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩.৮৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল। অন্যদিকে জাতিসংঘের হাতে রয়েছে তার মাত্র অর্ধেক টাকা। সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হলেও সেইভাবে সাড়া মেলেনি সেই উদ্যোগে। নতুন করে অনুদান না এলে অক্টোবর মাসেই রেশন প্রকল্প থেকে বাদ পড়বেন ৩২ লক্ষ মানুষ। ডিসেম্বরে সেই সংখ্যা কমবে আরও ৫০ লক্ষ।
পরিস্থিতি ঠিক কতটা ভয়াবহ, তা বোঝা যাবে পরিসংখ্যান থেকেই। ইউনিসেফের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইয়েমেনের প্রায় এক কোটির বেশি শিশুর জরুরি ভিত্তিতে সাহায্যের প্রয়োজন। যার মধ্যে ২৩ লক্ষ শিশু ভুগছে চরমতম অপুষ্টিতে। ৪ লক্ষের রয়েছে মৃত্যুর সম্ভাবনা। শুধু অপুষ্টিই নয়, চিকিৎসার সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা। বিগত কয়েক বছরে আবশ্যিক ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচিটুকুও নেওয়া হয়নি ইয়েমেনে। উভয় কারণের জন্য, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলেছে আরবের দেশটিতে। তবে এত কিছুর পরেও নিরুত্তাপ ইয়েমেন প্রশাসন। এখন দেখার আদৌ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কিনা…
আরও পড়ুন
পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ! দুর্ভিক্ষে নাজেহাল মাদাগাস্কার
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
চরম দুর্ভিক্ষের শিকার কঙ্গোর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ, রিপোর্ট প্রকাশ জাতিসংঘের