বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মানব সভ্যতার নিঃশব্দ ঘাতক জলবায়ু পরিবর্তন। বা, উল্টোটাও বলা যেতে পারে, প্রকৃতির ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে মানব সভ্যতা। বছরের পর বছর ধরে কার্বন নির্গমন, অরণ্যনিধন আর দূষণের দ্রুত হারে পরিবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর জলবায়ু। বাড়ছে নীল গ্রহের গড় উষ্ণতা। যাকে সহজ কথায় বলা হয় গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এবার প্রকৃতি রক্ষার স্বার্থে পরিবেশের মধ্যেই বদল আনার পরামর্শ দিলেন গবেষকরা। হ্যাঁ, সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রকাশিত জলবায়ু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জিওইঞ্জিনিয়ারিংকেই ভবিষ্যতের হাতিয়ার হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কী এই জিওইঞ্জিনিয়ারিং? কীভাবেই বা জলবায়ুর ত্রাতা হয়ে দাঁড়াবে এই পদ্ধতি?
জিওইঞ্জিনিয়ারিং বা ভূমণ্ডলীয় প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হল, কৃত্রিমভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। আর গবেষকদের আলোচনায় উঠে আসছে জিওইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুটি পদ্ধতি। তার একটি হল কৃত্রিমভাবে সূর্য থেকে আগত রশ্মির প্রতিফলন অন্যটি পরিবেশ থেকে মুক্ত কার্বন এবং গ্রিন হাউস হ্যাসের অপসারণ।
বেঙ্গালুরু আইআইটির গবেষক তথা জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ডঃ গোবিন্দস্বামী জানাচ্ছেন, পৃথিবীর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৫-৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় সালফার কণার এয়ারোসোল প্রতিস্থাপিত করলে, তা সৌরবিকিরণকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবে মহাশূন্যে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার প্রবেশ করার আগেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত হলে, তাপ শোষণ কমিয়ে আনা যাবে অনেকটাই। তবে সেখানেও থেকে যাচ্ছে অন্য একটি আশঙ্কা। অর্থনৈতিক কারণে বিশ্বের উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলি কতটা এই পদ্ধতির ভারবহন করতে পারবে, তা নিয়েই রয়েছে সন্দেহ। আর গোটা বিশ্বের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলেও, আঞ্চলিক জলবায়ুর পরিবর্তন উল্টে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে পৃথিবীর সামগ্রিক পরিবেশের পক্ষে।
ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে উঠে আসছে দ্বিতীয় বিকল্পটির কথা। পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণ। আর তার একটি উপায় হল বৃক্ষরোপণ। তাছাড়াও পরিবেশ থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসগুলিকে ঘনীভূত করে পাথর বা ভূগর্ভে ইনজেক্ট করেও, নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব পৃথিবীর তাপমাত্রা। এমনটাই জানাচ্ছেন রিও ডি জেনেইরো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লেটিসিয়া কুনহা। সৌরশক্তির প্রতিফলনের থেকেও এটিই তুলনামূলকভাবে সহজ পদ্ধতি।
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতি বছর ৭ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ভারতে
তবে মূল সমস্যা হল, জিওইঞ্জিনিয়ারিংকে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে আশঙ্কার কথা ভেবে স্বল্প স্তরে পাইলট প্রোজেক্টের পথেও হাঁটতে নারাজ গবেষকরা। আপাতত দুটি পদ্ধতিই রয়েছে গেডাঙ্কেন লেভেল বা চিন্তার স্তরে। আগামীতে কোন পদ্ধতিটিই ব্যবহার করা হবে, সে ব্যাপারে কোনো সুপারিশও দেয়নি রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিবেদনটি। তবে ২০২২ সালে জিওইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত চূড়ান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করা হতে পারে বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। তবে একথা অস্বীকার করার জায়গায় নেই, একমাত্র বিজ্ঞানই পারে পৃথিবীর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে। এখন দেখার, কত দ্রুত সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন গবেষকরা…
আরও পড়ুন
বারবার ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত বাংলা, সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধিই একমাত্র কারণ?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কেন্দ্রের চেয়েও অধিক উষ্ণতা বায়ুমণ্ডলে! সূর্যরহস্য সমাধান বিজ্ঞানীদের