জরুরি অবস্থা সমুদ্রে! সমুদ্র সম্মেলনে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত রাষ্ট্রপুঞ্জ মহাসচিবের

‘সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষায় কম-বেশি ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশই। সমুদ্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে তাই অবিলম্বেই জরুরী অবস্থা জারি করা প্রয়োজন।’

না, কোনো সংবাদমাধ্যম কিংবা পরিবেশকর্মীর মন্তব্য নয়। সম্প্রতি, একাধিক গবেষণার নথি উপস্থাপন করে এমনটাই দাবি জানালেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ। গত সোমবার থেকেই পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের (UN) সমুদ্র সম্মেলন (Ocean Conference)। আর এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান। জানালেন, সাগর ও মহাসাগরগুলির সংরক্ষণে একাধিক কার্যকরী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি কেবলমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে।

গত মার্চ মাসেই সমুদ্র সংরক্ষণের নীল-নকশা ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলিকে একহাত নিয়েছিলেন পরিবেশকর্মী এবং বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তারপরেও বদলায়নি পরিস্থিতি। এবার সেই বার্তাই দিলেন গুতেরেজ। জাতিসংঘের উপস্থাপিত নথি অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় সীমার বাইরে অবস্থিত সমুদ্রের মাত্র ১.২ শতাংশ সুরক্ষিত। এর বাইরে ৬৪ শতাংশ সামুদ্রিক অঞ্চল ভয়াবহ দূষণ কিংবা বিপর্যয়ের সম্মুখীন। 

বিগত পাঁচ দশকে হাঙর, ডলফিন, ওরকা-সহ অন্যান্য বড়ো সামুদ্রিক প্রজাতির জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। আর তার অন্যতম কারণ সমুদ্রের জলের অম্লতা বৃদ্ধি। রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন না করেই তা সরাসরি নিষ্কাশিত করা হচ্ছে সমুদ্রে। বিশ্বের ৮০ শতাংশ দেশের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই ঘটনা। তাছাড়া বেড়েছে প্লাস্টিকের পরিমাণও। প্রতিবছর গড়ে ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সামুদ্রিক পরিবেশে মিশছে বলেই দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের। এমনটা চলতে থাকলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে সমুদ্রে মাছের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে প্লাস্টিক। 

তবে মানুষের এই বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে শুধুই কি প্রভাবিত হচ্ছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র? একই সঙ্গে ক্রমশ বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে মানব সভ্যতার ওপরেও। ২০২১ সালে প্রকাশিত বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার রিপোর্ট উদ্ধৃতি করে গুতেরেজ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে সমুদ্রের তাপমাত্রা এবং সমুদ্রতল। তাছাড়াও জলোচ্ছ্বাস ও সাইক্লোনের মতো ঘটনার প্রবণতাও বাড়ছে গোটা বিশ্বজুড়েই। এর পিছনেও দায়ী রয়েছে অতিরিক্ত দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে অসংখ্য উপকূলীয় শহর এবং দ্বীপরাষ্ট্র তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে প্রবলভাবে। তাছাড়া খাদ্য ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের ৩৫০ কোটিরও বেশি মানুষ। সমুদ্র দূষণে বিপর্যস্ত হবেন তাঁরাও। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বের ৮০ শতাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের ম্যাপিং-এর আর্জি জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ মহাসচিব। জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও দূষণ রোধের জন্য বিশেষ প্রস্তাব রাখা হয়েছে বিশেষ চুক্তির। চলতি বছরে সমুদ্র সম্মেলনে অংশ নিয়েছে বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশের সাত সহস্রাধিক প্রতিনিধি। এখন দেখার তাঁদের সমর্থন আদৌ এই প্রস্তাবের পক্ষে যায় কিনা…

Powered by Froala Editor