২০১৫ সাল। প্যারিস সম্মেলনে ঠিক হয়েছিল ২১ শতকের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখতে না পারলে, জলবায়ু সংক্রান্ত বিপর্যয়ের শিকার হতে হবে মানব সভ্যতাকে। গবেষকরা জানিয়েছিলেন, এই লক্ষে পৌঁছানোর জন্য ২০৩০ সালের মধ্যেই অর্ধেক করা প্রয়োজন বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের পরিমাণ। বলাই বাহুল্য, তারপর ৮ বছর কেটে গেলেও, সেভাবে বড়ো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কোনো দেশই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই লক্ষে পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন গবেষকরা। আর সে-কথা মাথায় রেখেই জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) ঠেকাতে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করল জাতিসংঘ (UN)।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে এক বৈঠকে জাতিসংঘের মুখ্যসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ প্রকাশ্যে আনেন এই বিশেষ নির্দেশিকাটি। গুতেরেজের কথায়, ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি গত দেড় লক্ষ বছরের প্রেক্ষিতে, বর্তমান বিশ্ব সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। ফলে, ২০৪০-এর দশকেই বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলেই আশঙ্কা তাঁর। আর এই পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ-রাষ্ট্রগুলি। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ক্রমশ জলতলের উচ্চতা বাড়ছে সমুদ্রের। তাতে বহু মানুষ বাসস্থান হারাবেন বলেই আশঙ্কা। তাছাড়া, বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিটি মহাদেশের মূল ভূখণ্ডেও। তবে উপায়?
গুতেরেজের মতে, প্রতিটি দেশকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে নেট কার্বন-শূন্যে লক্ষে পৌঁছানোর। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের মডেলকে সামনে রেখে প্রতিটি দেশকেই নতুন প্রকল্প শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের গবেষক-দল। একইসঙ্গে ভারত, চিন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির কাছে ২০৫০ সাল থেকে নেট কার্বন-শূন্য হওয়ার সময় সীমা একদশক এগিয়ে আনার আবেদন জানাচ্ছে জাতিসংঘ।
বলাই বাহুল্য, এই লক্ষে পৌঁছানোর মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির নিয়ন্ত্রণে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশিকাতেও উল্লেখিত হয়েছে সে-কথা। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর আবেদনের পাশাপাশি, গ্রিন এনার্জি অর্থাৎ অপ্রচলিত শক্তির প্রচলনের ওপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আগামীতে সোলার প্যানেল, জলবিদ্যুৎ এবং বায়ুশক্তির প্ল্যান্ট স্থাপনে বিশেষ ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন অ্যান্টোনিও গুতেরেজ।
আগামী নভেম্বরেই দুবাই-এ আয়োজিত হতে চলেছে কপ-২৮ সম্মেলন। এই সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের পথে না এগিয়ে এলে, আদৌ কি সফল হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের এই উদ্যোগ?
Powered by Froala Editor