আদিবাসীদের তৈরি কোম্পানিই দেশের ‘সেরা’, স্বীকৃতি জাতিপুঞ্জের

দেশের নানা বাণিজ্যিক কোম্পানির কথা আমরা প্রায়ই আলোচনা করি। মুনাফালাভের প্রতিযোগিতায় হয়তো অনেক কোম্পানিই এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু জাতিপুঞ্জের উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় তাদের সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে আধিমালাই পাজাংগুদিইনার কোম্পানি। না, দেশের অনেকেই হয়তো এমন একটি কোম্পানির নাম শোনেননি। আসলে আদিবাসী উপজাতিদের হাত দিয়েই যে একটি সফল বাণিজ্যিক কোম্পানির জন্ম হতে পারে, সেটা ভাবতেই অবাক লাগে। আর সেই কোম্পানিই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সমস্ত সংস্থাকে টেক্কা দিয়েছে কোম্পানিটি (Tribal Company)।

শুধু জাতিপুঞ্জের (UN) পুরস্কারটিই নয়, এর আগে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সবুজ অর্থনীতিতে সাফল্যের জন্যও পুরস্কার পেয়েছে আধিমালাই পাজাংগুদিইনার। আর এই সাফল্যের পিছনে থাকা প্রতিটা মানুষই কুরুমবা উপজাতির মানুষরা। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের অন্যতম বিপন্ন উপজাতিগুলির একটি কুরুমবা। নীলগিরি পাহাড়ি অঞ্চলে বাস এই উপজাতির মানুষদের। কয়েকশো বছর ধরে তাঁদের একমাত্র জীবিকা মধু সংগ্রহ করা। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বনে মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে নাগরিক সংস্কৃতির আগ্রাসন তো রয়েছেই। এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন সেখানকার মানুষরাই।

২০১৩ সালে তৈরি হয় আধিমালাই পাজাংগুদিইনার কোম্পানিটি। মধু সংগ্রহ করে তার উপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেটজাত করা থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা পর্যন্ত সবই করেন কুরুমবা উপজাতির মানুষরা। তবে শুধু এটুকুই নয়। পাশাপাশি বনে যাতে আরও বেশি মৌমাছি আসে, সেদিকেও নজর দিয়েছেন তাঁরা। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল কিনে নিয়ে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করার কাজ করে চলেছেন তাঁরা। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, এই গোটা কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজাতি সম্প্রদায়ের মহিলারাই।

একদিকে পরিবেশ সমস্যা, অন্যদিকে উপজাতিদের আর্থিক ক্ষমতায়ন – এই যৌথ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে আধিমালাই পাজাংগুদিইনার কোম্পানি। পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নটি তো রয়েছেই। এই বহুমুখী সাফল্যের কারণ হিসাবেই জাতিপুঞ্জের ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে ইকুয়েটর পুরস্কার পেল আধিমালাই পাজাংগুদিইনার। কুরুমবা উপজাতির মানুষদের এই সাফল্য যে দেশের অন্যান্য উপজাতিদেরও অনুপ্রেরণা যোগাবে, সেটা বলাই যায়।

আরও পড়ুন
ফুটবলের ‘কবীর খান’: আদিবাসী মেয়েদের খেলা শিখিয়েই হারানো স্বপ্নের খোঁজ কোচের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘বাধ্য’ হয়েই লিভ-ইন করেন ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা, কী সেই কারণ?

Latest News See More