রাস্তার ঠিক ধারেই গোল ছাতার মতো একটা গম্বুজাকৃতি কাঠামো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, হয়তো তীব্র দাবদাহের থেকে পথযাত্রীদের খানিক নিস্তার দিয়েই এই আস্তানা তৈরি করা হয়েছে। হ্যাঁ, এই পরিকাঠামো যে যাত্রীদের ছায়া প্রদান করবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো। তবে তার থেকেও বড়ো কথা, এই ছোট্ট কাঠামোই আগামীতে হয়ে উঠবে জীবাশ্ম জ্বালানির অন্যতম বিকল্প।
‘সোলারবোটানিক ট্রিস’। সম্প্রতি এই ব্রিটিশ সংস্থার হাত ধরেই বাজারে এল আশ্চর্য এই যন্ত্রের প্রোটোটাইপ। যা পরিচিত ‘সোলার ট্রি’ বা ‘সৌরগাছ’ (Solar Tree) নামে। ‘সৌরগাছ’ কোনো নতুন প্রযুক্তি নয়, গত দশক থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বসানো হয়েছে সৌরগাছ। এমনকি বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম সৌরগাছটি রয়েছে এই বাংলাতেই। সেট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতার নিরিখে দেখতে গেলে, ব্রিটিশ সংস্থার তৈরি এই অভিনব এবং উত্তরাধুনিক সৌরগাছ ছাপিয়ে যাবে সমস্ত রেকর্ডকেই। পাশাপাশি তার আয়তনও তবে সাধারণ সোলার প্যানেলের বা সৌরগাছের থেকে অনেকটাই ছোটো।
আশ্চর্য এই প্রযুক্তির নেপথ্যে রয়েছে ন্যানো ফটোভোল্টিক সেল। যা সাধারণ সৌর প্যানেলের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কার্যক্ষম। গবেষকদের অনুমান, ১৮-২০টির মতো এধরনের সৌরগাছ ৪০০০ বর্গমিটার সৌরপ্যানেলের সমপরিমাণ শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। তার অন্যতম কারণ হল, এই যন্ত্রের উপরের গম্বুজাকৃতি অংশটি সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে বদলাতে থাকে কৌণিক অবস্থান। পাশাপাশি অত্যন্ত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চার্জিং-এও সক্ষম এই গাছ। সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির কথায়, চলতি বছরের শেষের দিকেই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে এই ভবিষ্যতের প্রযুক্তির। প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে ইতি টানবে এই সৌরশক্তি উৎপাদনকারী যন্ত্র?
আসলে যুক্তরাজ্য তো বটেই, পশ্চিমী দুনিয়ায় ক্রমশ বাড়ছে ইলেকট্রিক ভেহিকল বা বিদ্যুৎচালিত যানের ব্যবহার। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যেই ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে, ৪০ হাজারের বেশি বৈদ্যুতিক যানের চার্জিং পয়েন্ট। তবে সেক্ষেত্রে গাড়ির ব্যাটারি সম্পূর্ণভাবে চার্জ হওয়ার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সমস্যার জন্যই, পেট্রোল-ডিজেল চালিত যান ব্যবহারের দিকেই ঝুঁকছে সমাজের একটা বড়ো অংশ। আগামীতে এই সমস্যারই ইতি টানবে ‘সোলার ট্রি’। পাশাপাশি তা স্থাপনের খরচও তুলনামূলকভাবে কম। ২২-৩০ হাজার ডলারের মধ্যেই নির্মাণ সম্ভব এক একটি সোলার পাওয়ার স্টেশনের। সবমিলিয়ে কল্পবিজ্ঞানের পাতা থেকে উঠে আসা এই প্রযুক্তি আগামীদিনে বদলে দিতে পারে মানব সভ্যতার সম্পূর্ণ ছবিটাই।
Powered by Froala Editor