২০১৪-১৫ সালের কথা। গোটা বিশ্বজুড়ে তখন জ্বলছে হিংসার আগুন। একদিকে যেমন হাজার হাজার শিশু মারা যাচ্ছে সিরিয়া, প্যালেস্টাইনে; তেমনই যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। আগ্নেয়াস্ত্রের লড়াইয়ে প্রাণ বাঁচাতে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেসময় আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিলেন ইউরোপে। জার্মানি, ফ্রান্স অন্যান্য প্রথম বিশ্বের দেশগুলি তাঁদের জায়গা করে দিলেও, ‘অবৈধ’ শরণার্থীদের এককথায় তাড়িয়ে দিয়েছিল ব্রিটেন। তবে অর্ধ দশক পর যেন মতি বদল হল ব্রিটেনের। প্রায় সমগ্র আফগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পর এবার আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা ঘোষণা করল যুক্তরাজ্য।
গতকাল ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয় ‘আফগান সিটিজেনস রিসেটলমেন্ট স্কিম’। সেখানেই উল্লেখিত হয়, ২০ হাজার আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে ইউরোপের অন্যতম শক্তিধর দেশটি। তবে একইসঙ্গে ২০ হাজার শরণার্থী প্রবেশ করতে পারবে না ব্রিটেনে। বরং, চলতি বছর জায়গা করে দেওয়ার হবে ৫ হাজার বাস্তুচ্যুতকে। পরবর্তী সময়ে বসবাসের অনুমতি পাবেন আরও ১৫ হাজার আফগান নাগরিক। তালিবান জমানায়, বর্তমানে সবথেকে বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন গুজরান করছেন সেখাঙ্কার নারী এবং কিশোরী। তাই তাঁদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছে ব্রিটেন। সেইসঙ্গে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির কাছেও আহ্বান করেন আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের জন্য।
তবে ব্রিটিশ প্রশাসনের আগে আফগানিস্তানে বসবাসরত একাধিক ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ও দূতাবাসের আধিকারিকরা আবেদন করেছিলেন যাতে তাঁদের আফগান সহকর্মীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয় ব্রিটেনে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরাও আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের জন্য যথেষ্ট ইচ্ছুক। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের প্রবীণদেরও এগিয়ে আসতে দেখা যায় শরণার্থীদের আশ্রয়দানের জন্য। নিজ বাসভবনের একাংশে উদ্বাস্তু আফগানদের থাকার বন্দোবস্ত করে দেবেন বলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন অপেকে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক হিসাবেই দেখছে ব্রিটিশ প্রশাসন।
তবে শুধু বাসস্থান নয়, যাতে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে জীবন ও জীবীকার সুযোগ পান আফগানরা, সেই দিকেও নজর রাখছে বলেই জানাচ্ছে ব্রিটিশ প্রশাসন। তবে এই মুহূর্তে অভিভাবকহীন শিশুদের জন্য দরজা বন্ধই থাকছে ব্রিটেনে। তবে ব্রিটেনের আগেই, কানাডা এমনকি আফ্রিকার তথাকথিত অনুন্নত দেশ উগান্ডাও দরজা খুলে দিয়েছে আফগান শরণার্থীদের জন্য। সেখানেও আশ্রয় পেতে চলেছেন ২০ হাজার করে শরণার্থী। কিন্তু, আফগানিস্তানের জনসংখ্যা যেখানে প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি, সেখানে এই ২০ হাজার কেবলই সংখ্যামাত্র। অধিকাংশ আফগান নাগরিকদের জীবন যে আগামীদিনে অন্ধকারাচ্ছন্নই থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো!
আরও পড়ুন
তালিবান জমানায় কোথায় আছেন বিশ্ববিখ্যাত ‘দ্য আফগান গার্ল’?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আফগান সহকর্মীদের ছেড়ে দেশে ফিরতে নারাজ প্রাক্তন ব্রিটিশ সেনা