ভারত থেকে লুণ্ঠিত টিপু সুলতানের সিংহাসন-টুকরো নিলামে

আঠারো শতকের শেষের দিক সেটা। ততদিনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে গোটা বাংলা। দিল্লিতে মোঘল শাসনও তখন নিভু নিভু। ফলে, অবাধেই সাম্রাজ্যবিস্তারের ছক কষছে ব্রিটিশ রাজ। তবে সেই পথে অন্যতম কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দক্ষিণ ভারত। যার নেপথ্যে ছিলেন মাইসোরের সম্রাট টিপু সুলতান (Tipu Sultan)। কিন্তু স্থায়ী হয়নি প্রতিরোধ। ১৭৯৯ সালে রেশ পড়ে দীর্ঘ দু’দশক ধরে চলতে থাকা দ্বন্দ্বে। শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধে নিহত হন টিপু সুলতান। তারপর গোটা মাইসোরজুড়ে চলেছিল ব্রিটিশদের লুঠতরাজ। টিপু সুলতানের ব্যবহৃত বহুমূল্য সামগ্রী, অলংকার, তরবারি থেকে শুরু করে স্বর্ণখোচিত সিংহাসনও ব্রিটেনে স্থানান্তরিত করেছিল ঔপনিবেশিক শক্তি। এবার দু’ শতাব্দী পেরিয়ে এসে নিলামে উঠতে চলেছে সেই ঐতিহাসিক সিংহাসনের অংশ (Throne)। 

আট ফুট চওড়া অষ্টভূজাকৃতি এই সিংহাসনকে ঘিরে রাখত রূপোর তৈরি রেলিং। তার মধ্যে স্থাপিত ছিল সম্পূর্ণ সোনায় তৈরি হিরে, পান্না, মুক্তো ও বিভিন্ন পাথরখচিত ৮টি ব্যাঘ্রমস্তক। আসনের দু’ধারে ছিল রুপোর তৈরি সিঁড়ি। তাছাড়াও সিংহাসনের কেন্দ্রে ছিল আরও একটি সোনার তৈরি ব্যাঘ্রমস্তক ও পাখির মূর্তি। মাইসোর-জয়ের পর সিংহাসনটি বিভিন্ন অংশ বিভক্ত করে ব্রিটেনে নিয়ে যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কেন্দ্রীয় ভাস্কর্যটি ব্রিটিশ রাজ তৃতীয় জর্জ ও রানী শার্লটকে উপহার দিলেও, অন্যান্য অংশগুলির অস্তিত্ব মুছে গিয়েছিল ইতিহাসের পাতা থেকে। 

নিলামে উঠতে চলা ব্যাঘ্রমস্তকটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০০৯ সালে। তারপর তার জায়গা হয়েছিল লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। না, ঐতিহাসিক এই ভাস্কর্য ভারতে ফেরানোর কোনো উদ্যোগই নেয়নি ব্রিটিশ প্রশাসন। বরং, তার রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছিল আলাদা করে। 

মাস কয়েক আগেই সিংহাসনটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকারের তথ্য, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া মন্ত্রক। সেই সিদ্ধান্ততেই এবার পাকাপাকি শিলমোহর চাপাল সরকার। সংশ্লিষ্ট ভাস্কর্যটির দাম ধার্য হল ১৫ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি নিলামে বিক্রি হতে চলেছে টিপু সুলতানের ব্যবহৃত আরও বেশ কিছু সামগ্রী। 

আরও পড়ুন
আফগানিস্তান থেকেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েছিলেন ভারতীয় রাজা

প্রথমত, এই ধরনের ঐতিহাসিক প্রত্নসামগ্রীকে নিলামে তোলা নিয়ে এর আগেই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল ব্রিটিশ সরকারের দিকে। এবার সাম্প্রতিক ঘোষণা যেন আরও একবার ঘৃতাহুতি ছিল সেই বিতর্কে। দ্বিতীয়ত, নিলামে ওঠার পরও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলেই জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এক কথায় টিপু সুলতানের এই সিংহাসনের ভারত প্রত্যাবর্তন আটকাতেই যেন এই সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের। 

আরও পড়ুন
ব্রিটিশ রাজপরিবারের কঠোর নিয়ম, স্বাধীনতা নেই পোশাক নির্বাচনেও!

এই সিংহাসনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে নতুন করে বলার নেই কিছুই। পাশাপাশি মার্বেলের স্তম্ভের ওপর নির্মিত এই ব্যাঘ্রমূর্তি কর্ণাটকের প্রাচীন স্বর্ণশিল্পেরও এক বিরল নিদর্শন বটে। এখন দেখার ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তের পর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে ভারত সরকার আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেয় কিনা…

আরও পড়ুন
ফরাসি স্থাপত্যের ছোঁয়া সর্বাঙ্গে, অবহেলায় ধুঁকছে টিপু সুলতানের দুর্গ

Powered by Froala Editor