ইংল্যান্ডে করোনা-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, বাতিল বড়োদিনের উৎসবও

অবশেষে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আত্মসমর্পণ করল ইংল্যান্ড সরকার। সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গে দেশের করোনা পরিস্থিতি চলে গেছে আয়ত্তের বাইরে, মেনে নিলেন খোদ ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক। বেশ কিছুদিন ধরেই নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছিল সংক্রমণ। গত ১৯ তারিখে একদিনে ইংল্যান্ডে সংক্রমিত হন ২৭ হাজার জন মানুষ। গতকাল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৩৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ হাজারে। সংক্রমণ লাগিয়ে বাড়ার এই ঘটনায় রীতিমতো বেকায়দায় ব্রিটিশ প্রশাসন।

সাম্প্রতিক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্রিটেন স্বাস্থ্যসচিব হ্যানকক জানান, একটি নতুন করোনাভাইরাসের স্ট্রেনকে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। পূর্ববর্তী ভাইরাসের তুলনায় এই স্ট্রেনের সংক্রমণের হার আরও ৭০ শতাংশ বেশি। ফলে সংক্রমণের এই উদ্বেগজনক হার নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে পুনরায় সম্পূর্ণ লকডাউনকেই বেছে নিয়েছে বোরিস জনসনের সরকার। বাতিল করা হয়েছে বড়োদিনের উৎসবও। পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল ধরেই চলবে এই লকডাউন পর্ব।

তবে উৎসবের মরশুমে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের একাংশ নেতারা। সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা এবং সাধারণ নাগরিকরাও। বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ইংল্যান্ডের রাস্তায় নামছে মানুষের ঢল। রেলস্টেশন থেকে শুরু করে শপিং মল, রেস্তোরাঁ— সব জায়গাতেই বাড়তে দেখা গেছে ভিড়ের আধিক্য। 

তবে ইংল্যান্ডের সামগ্রিক ছবির একেবারে উল্টো পরিস্থিতি ব্রিটেনের অন্য দুই অঙ্গরাষ্ট্র— ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে। সাবধানতা অবলম্বন করতে ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডের বাসিন্দাদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে ব্রিটেনের এই দুই দেশ। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েই লকডাউন ঘোষণা করেছে ওয়েলস। স্কটল্যান্ডে জানানো হয়েছে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ। 

চলতি মাসেই ব্রিটেন শুরু করেছিল গণটিকাকরণের প্রক্রিয়া। এখনও পর্যন্ত ৩৫ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলা জানা গেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম থেকে। তবে অবিশ্বাস্য হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি এই পরিস্থিতিতে টিকাকরণের মাধ্যমে ঠেকানো যাবে, সেই সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। গতকাল মোট সংক্রমণের নিরিখে তুরস্ককে টপকে পৃথিবীতে ষষ্ঠ স্থানে উঠে আসে ব্রিটেন। পঞ্চম স্থানে থাকা ফ্রান্সে সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম হওয়ায়, ফ্রান্সকেও টপকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বলা যেতে পারে সংক্রমণের এই দ্বিতীয় তরঙ্গের সামনে ইউরোপে করোনাভাইরাসের হটস্পটে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকেরা। তবে এই দিশেহারা অবস্থা থেকে এখনও অবধি সুরাহার হদিশ দিতে পারেননি কেউ-ই...

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
১ কোটি ছাড়াল করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা, আরোগ্য আর কতদূর?