পড়ুয়াদের ‘গো-বিজ্ঞান’ বিষয়ক পরীক্ষায় উৎসাহ দিতে উপাচার্যদের নির্দেশ ইউজিসি-র!

গবাদি পশু সম্বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে মাসখানেক আগেই ‘গো-বিজ্ঞান’ বিষয়ক জাতীয় স্তরের পরীক্ষার কথা জানিয়েছিল রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ। শুরু থেকেই এই কর্মসূচিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একরাশ বিতর্ক। আর এর মধ্যেই সেই বিতর্কের অংশীদার হয়ে উঠল ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনও। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাছে একটি লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন ইউজিসি সেক্রেটারি রজনীশ জৈন। আর তাতে প্রত্যেকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁরা যেন নিজের নিজের প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

যদিও ইউজিসি কর্তৃক পাঠানো এই আবেদনে কোথাও বাধ্যবাধকতার কোনো উল্লেখ নেই, তবু এটাকে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার উপরে একধরণের হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছেন শিক্ষক সমাজের একাংশ। ইউজিসি তো আসলে কোনো ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট নিয়ম চাপিয়ে দিতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর। তবে তার নির্দেশিকা মেনে চলার উপরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা পাওয়ার দিকটি নির্ভর করে। সেখানে এমন একটি পরীক্ষার বিষয়ে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে, যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্মন্ধেই ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

জানুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগের পক্ষ থেকে বিশেষ সিলেবাস ও স্টাডি মেটিরিয়াল আপলোড করা হয় নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে। আর সেই স্টাডি মেটিরিয়াল দেখেই মাথায় হাত বিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের। তিনটি আলাদা আলাদা অধ্যায়ে বিস্তৃত পাঠ্যবস্তু। আর তার শুরুর অধ্যায়েই বর্ণনা করা হয়েছে বেদ ও অন্যান্য শ্রুতি ও স্মৃতিসাহিত্য এমনকি বাইবেল এবং আরব দার্শনিকদের গরু সম্বন্ধে চিন্তাভাবনার কথা। যে পরীক্ষার নাম ‘গো-বিজ্ঞান’, সেখানে পাঠ্যবস্তুতে এইসমস্ত বিষয় থাকার কারণ বুঝতে পারছেন না অনেকেই। মনে পড়ে যায়, কিছুদিন আগেই শাসকদলের বেশ কিছু নেতামন্ত্রী গরুর দুধে সোনার অস্তিত্বের কথা বলে কৌতুকের শিকার হয়েছিলেন। আশ্চর্য বিষয় হল, কেন্দ্রীয় সংস্থার পাঠ্যবস্তুতেও একই কথা বলা হয়। বলা হয়েছে দেশি গরুর দুধে সোনার উপস্থিতির জন্যই তার রং হলুদ। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পড়ে ইংরেজি পাঠ্যবস্তু থেকে সেই বিতর্কিত লাইনটি বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তামিল বা মালায়ালমের মতো আঞ্চলিক ভাষার পাঠ্যবস্তুতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

একইভাবে এখনও পাঠ্যপবস্তুতে দাবি করা হচ্ছে, গোমূত্র নাকি মানুষের যাবতীয় রোগের এক মহৌষধ। পঞ্চগব্যের বিশেষ আয়ুর্বেদিক গুণ নিয়ে আছে বিস্তৃত অধ্যায়। সেখানে এমনও দাবি করা হয়েছে, নিয়মিত গোমূত্র পান করলে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পায়। সব মিলিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে চলা এই পরীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে সংশয়ের শেষ নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ পড়ুয়াদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক মানসিকতার বিকাশ ঘটানো। ইউজিসি-র এই নির্দেশিকা যেন সেই প্রাথমিক শর্তের জায়গাতেই বাধা তৈরি করছে। নাকি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে দূরে সরিয়ে ফেলারই একটা উদ্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে? এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More