স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা চলছে পুরোদমে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, খেলোয়াড়দের সকলের চোখই বাঁধা মোটা আইমাস্কে। তা সত্ত্বেও কীভাবে অনায়াসেই ফুটবলের গতিবিধি বুঝতে পারছেন তাঁরা? এই দৃশ্য দেখলে অনেকেই ভাববেন, এ-বুঝি কোনো ম্যাজিক-ট্রিক। তবে ব্যাপারটা তেমন নয়। দশরথের শব্দভেদী বাণ ছোঁড়ার সেই গল্প মনে আছে? এও অনেকটা তেমনই। দৃষ্টি নয়, বরং শব্দের মধ্যে দিয়েই বল ও অন্যান্য খেলোয়াড়দের নির্ণয় করছেন তাঁরা।
না, সাধারণ মানুষের জন্য নয়, দৃষ্টিহীন মানুষদের (Blind People) জীবনের মূল স্রোতে ফেরাতেই এই বিশেষ ফুটবলের আয়োজন। আর এই খেলার জন্ম উগান্ডায় (Uganda)। দৃষ্টিহীনদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর লক্ষ্য নিয়েই বছর দুয়েক আগেই গড়ে ওঠে ‘ব্লাইন্ড ফুটবল উগান্ডা’ (Blind Football Uganda) সংস্থা। দেশজুড়ে এই ফুটবলের আয়োজন করেন তাঁরাই। কিন্তু কীভাবে খেলা হয় এই ফুটবল?
সাধারণ ফুটবলের থেকে এই বিশেষ ফুটবলের গঠন খানিক আলাদা। তার ব্লাডারের ভিতরে ভরা থাকা ছোটো ছোটো হালকা লোহার বল। ফলে, বল গড়ালেই তা থেকে উৎপন্ন হয় বিশেষ শব্দ। সেই শব্দ শুনেই লক্ষ্যভেদ করতে হয় খেলোয়াড়দের। পাশাপাশি দুই দলের খেলোয়াড়রা মুখ থেকে উৎপন্ন করেন পৃথক পৃথক দু’ধরনের শব্দ। সেই শব্দ শুনেই সতীর্থ বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের গতিবিধি বুঝতে হয় খেলোয়াড়দের। একইভাবে পৃথক শব্দ উৎপন্ন হয় গোল পোস্ট থেকেও।
ফুটবলকে উগান্ডার ঐতিহ্য বললে ভুল হয় না এতটুকু। পরিসংখ্যার বিচারে সেটাই সেখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ায় সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষদের খেলাধুলোর জন্য বিশেষ সুবিধা নেই। তাই তাঁদের জন্য এই অভিনব ফুটবলের প্রচলন করেন উগান্ডার প্রতিবন্ধী বিকাশ বিভাগ।
সব মিলিয়ে তিনটি বিভাগে খেলা হয় এই ফাইভ-সাইড ফুটবল। ‘বি১’ বিভাগে খেলেন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীনরা। অন্যদিকে ‘বি২’ ও ‘বি৩’ বিভাগের খেলা হয় আংশিক দৃষ্টিহীনদের নিয়ে। বিগত দু’বছরে সে-দেশে গড়ে উঠেছে ৫টি আস্ত ব্লাইন্ড ফুটবল ক্লাব। যার মধ্যে রয়েছে একটি মহিলা দলও।
ইতিমধ্যেই এই খেলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ব্লাইন্ড স্পোর্টস ফেডারেশন। উগান্ডা ছাড়াও এই খেলা রীতিমতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কিছু দেশে। এমনকি বাংলাতেও মাস খানেক আগে আয়োজিত হয়েছিল ব্লাইন্ড ফুটবল। এই ফুটবলের পরিকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি, বর্তমানে উগান্ডার মূল লক্ষ্য আগামীদিনে ব্লাইন্ড ফুটবলের প্যালিম্পিক আয়োজন। তারই প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তাছাড়াও ব্লাইন্ড ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করছে উগান্ডা। সবমিলিয়ে ফুটবলকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই প্রয়াস সত্যিই অভিনব…
Powered by Froala Editor