সারা পৃথিবীতে ক্রমশ বেড়ে চলেছে পানীয় জলের চাহিদা। একদিকে দ্রুতহারে গলন হচ্ছে হিমবাহের। কমছে মিষ্টিজলের উৎস। অন্যদিকে ফুরিয়ে আসছে পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারও। ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু ভারত নয়, বরং সারা পৃথিবীতেই চরমে পৌঁছাবে পানীয় জলের সংকট। তবে এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও আশার আলো দেখাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পৃথিবীর মধ্যে শুষ্কতম দেশ হিসাবেই পরিচিত। আরবের ছোট্ট এই দেশে যেমন নেই কোনো নদী, তেমনই সারাবছর বৃষ্টিপাত হয় মাত্র ১০ দিন। পাশাপাশি আরব আমিরশাহির ভূগর্ভস্থ জলের ৯০ শতাংশই লবণাক্ত। জলের একমাত্র উৎস হিসাবে তাই বিকল্প হিসাবে মরুভূমির এই দেশ বেছে নিয়েছে সমুদ্রের জলকেই।
সাধারণত সমুদ্রের জল লবণাক্ত হওয়ার দরুণ পানের অযোগ্য। শুধু লবণের উপস্থিতিই শুষ্ক করে দিতে পারে শরীর। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে মানুষকে। সমুদ্রের লবণাক্ত জলকেই পরিশোধিত করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে তৈরি করা হয়েছে বহু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। যাদের প্রাথমিক কাজই হল সমুদ্রের জল থেকে ছেঁকে ফেলা লবণকে। জলের চাপ বাড়িয়েই আলাদা করা হয় জলে মিশ্রিত লবণকে। তারপর পরিশ্রুত করা হয় অন্যান্য দূষক পদার্থকেও।
প্রতিদিন এই প্রক্রিয়াতেই কয়েকশো কোটি লিটার পানীয় জলের এভাবেই জোগান দিয়ে চলেছে আরব আমিরশাহি। যা সারা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু মানুষের পানীয়ই নয়, বন্য প্রাণী, নার্সারি এবং অন্যান্য ঘরোয়া কাজের জন্যেও ব্যবহৃত হচ্ছে সমুদ্রের এই পরিশ্রুত জলই। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে শুষ্ক মরুভুমির মধ্যে। আরব আমিরশাহির ৯০ শতাংশ জলের চাহিদা মেটাচ্ছে সমুদ্রের জলই।
তবে এখানেই শেষ নয়। সমুদ্রের জল থেকে আলাদা করা লবণকে কাজে লাগিয়ে পৃথকভাবে পানীয় জল তৈরির অভিনব পন্থার খোঁজ দিচ্ছে ছোট্ট এই দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এরোপ্লেনের মাধ্যমে কয়েক হাজার মিটার উচ্চতায় আকাশের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয় এই উৎপাদিত বাড়তি লবণ। আর আকাশের লবণের উপস্থিতি দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে মেঘকে। ‘ক্লাউড সিডিং’ নামের এই পদ্ধতিতেই কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ জলের উৎস খুঁজে বার করেছে আরব আমিরশাহি। ২০১৭ সাল থেকে প্রায় প্রতিদিনই নির্দিষ্ট অঞ্চলে এই ব্যবহার করে আসা হচ্ছে এই প্রক্রিয়া। আর বৃষ্টিপাতের সেই জলকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে বিশালাকার ড্যাম তৈরি করে।
বিশ্বব্যাপী যেভাবে পানীয় জলের চাহিদা বেড়েই চলেছে দিন দিন, আগামী সমুদ্রের জলকে পরিশ্রুত করেই চাহিদা মেটাতে হবে জলের। সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে প্রত্যেক দেশের প্রশাসনকেই। অন্যথায় পানীয় জলের দাম আকাশ ছোঁবে সাধারণ মানুষের জন্য। তবে কীভাবে গোটা প্রক্রিয়া সম্ভব, কীভাবে নাগরিকদের জন্য ব্যবস্থা করা যায় বিশুদ্ধ জলের— সেই পথ দেখিয়ে দিয়েছে আরব আমিরশাহিই। এখন দেখার সেই পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ ঠিক কতটা সময় নেয়...
আরও পড়ুন
মাটির নিচে ২ হাজার বছরের প্রাচীন শহর, ঘরে-ঘরে পানীয় জলের পরিষেবা!
Powered by Froala Editor