মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মাছ, নেপথ্যে গাড়ির টায়ার!

গ্রীষ্ম পড়লেই সলোমন মাছে ছেয়ে যায় ওয়াশিংটন (Washington) রাজ্যেরও নদী এবং খাঁড়িগুলি। প্রজননের জন্য প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে আসে এই বিশেষ প্রজাতির মাছ। অনেকটা আমাদের ইলিশের মতোই। তবে বিগত কয়েক বছরে হঠাৎ করেই বদলে গেছে এই দৃশ্য। নদীতে মাছের আগমন হলেও, মারা যাচ্ছে হাজার হাজার সলোমন (Salmon Fish)। 

পরিবেশকর্মী থেকে প্রাণীবিদ— সকলকেই চিন্তিত করে তুলেছিল এই ঘটনা। কেন মারা যাচ্ছে কাতারে কাতারে মাছ? প্রাথমিকভাবে সকলেই সন্দেহ করেছিলেন, হয়তো অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে নদীর জলে। আর সেই কারণেই মৃত্যু হচ্ছে মাছেদের। তবে গবেষণায় উঠে আসে, ওয়াশিংটনের নদী ও খাঁড়িগুলির জলে অক্সিজেনের ঘাটতি নেই। তবে? কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিলেন তাবড় টক্সিকোলজিস্টরা। দীর্ঘ তিন-চার বছরের গবেষণার পর, অবশেষে উত্তর পেলেন তাঁরা।

কীটনাশক বা অন্যান্য রাসায়নিকের প্রভাব নয়, জলের গুনমান বিশ্লেষণে পাওয়া যায়নি আর্সেনিক কিংবা অ্যান্টিমনির মতো কোনো ভারি ধাতুর উপস্থিতিও। এই গণমৃত্যুর আসল কারণ হল প্লাস্টিক। আর সেই প্লাস্টিক দূষণের উৎসও বেশ অবাক করার মতোই। না, সাধারণ বর্জ্য থেকে এই দূষণ ছড়াচ্ছে না। বরং, তার জন্য দায়ী গাড়ির টায়ারের (Tyre) ক্ষয়। 

হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। বছর দুয়েক আগের কথা। ২০২০ সালে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কিত একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার’। সেখানে উঠে এসেছিল, টেক্সটাইল ফাইবারের পর মাইক্রোপ্লাস্টিকের সবচেয়ে বড়ো উৎস হল গাড়ির টায়ার। এমনকি টায়ার থেকে ন্যানোপ্লাস্টিকও তৈরি হচ্ছে বলে সন্দেহ করেছিলেন তাঁরা। ওয়াশিংটন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবার নিশ্চিত করল সেই আশঙ্কাকেই। 

ওয়াশিংটনের স্নেক রিভার, ইয়াকিমা কিংবা কলোম্বিয়া নদী তীরবর্তী অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু টায়ার নির্মাণ ও মেরামতকারী কারখানা। সেখান থেকেই ব্যাপকমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে মাইক্রো এবং ন্যানোপ্লাস্টিক। মূলত, টায়ার তৈরিতে প্রাকৃতিক রাবার ছাড়াও ব্যবহৃত হয় ৬-পিপিডি-কুইনোন নামের একটি বিশেষ রাসায়নিক যৌগ। এই যৌগের শৃঙ্খলই কাজ করে ন্যানো-প্লাস্টিক হিসাবে। যা শুধু প্লাস্টিক হিসাবেই বিপজ্জনক নয়, বিষাক্তকর পদার্থও বটে। এই রাসায়নিক যৌগটির কারণেই মৃত্যু হচ্ছে ওয়াশিংটনের সলোমন মাছেদের। 

তবে উপায়? সাধারণত সমুদ্রের জল থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক পৃথকীকরণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন এবং খরচসাপেক্ষ হয়ে থাকে। সেখানে দাঁড়িয়ে ওয়াশিংটনের নদীকে ন্যানোপ্লাস্টিক-মুক্ত করে তোলা প্রায় অবাস্তব। অর্থাৎ, একদিনে বদলাবে না পরিস্থিতি। বা, অন্যভাবে বলতে গেলে, মাছের গণমৃত্যু ঠেকাতে অপারগ বিজ্ঞানীরাও। তবে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল পাওয়ার পর, ন্যানোপ্লাস্টিকের দূষণ রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেবে সরকার, তেমনটাই আশা করছেন গবেষকরা… 

Powered by Froala Editor