ধীরে ধীরে আম্পায়ারের মাথার উপর উঠছে একটা আঙুল। উল্লাসে ফেটে পড়ছেন বোলার। সতীর্থরা এগিয়ে আসছেন এক-এক করে। এদিকে মাথা নত করে ফিরে যাচ্ছেন ব্যাটার। আক্ষেপের চিহ্ন তাঁর শরীরের প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে। একবার হয়তো ব্যাট চালিয়ে নিয়ে বুঝে নিলেন ভুলটা ঠিক কোথায় হয়েছিল। স্কোরবোর্ড বলছে তাঁর নামের পাশে একটা বিরাট শূন্য। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ডাক’ (Duck)। তা সে এক বলে আউট (Out) হোক বা বেশ কয়েকটি বল খেলে, কী যায়ে আসে?
উঁহু, সেটি বললে চলবে না। শূন্য মানে শুধু ‘ডাক’ নয়, ক’বল খেলে আউট হলেন সেই ব্যাটার, তার উপর নির্ভর করছে ‘ডাক’-এর প্রকারভেদ। অর্থাৎ এক বলে আউট বা তিন বলে আউটের ‘ডাক’ একরকম নয়। আর প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। মোট নয় প্রকার ‘ডাক’ রয়েছে ক্রিকেটে। কী সেগুলি? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
গোল্ডেন ডাক (Golden Duck) : আগেরজন ফিরে যাওয়ার পর সদ্য মাঠে নেমেছেন নতুন ব্যাটার। তীক্ষ্ণ নজর বুলিয়ে দেখে নিলেন কোথায় কোন ফিল্ডার রয়েছে। আম্পায়ারকে ডেকে পা ঘষে বুঝে নিলেন কোথায় রয়েছে স্ট্যাম্প। কিন্তু একি! এত আয়োজনের পর প্রথম বলেই আউট তিনি। আর একেই বলা হয় ‘গোল্ডেন ডাক’। মহেন্দ্র সিং ধোনির আন্তর্জাতিক কেরিয়ার কিন্তু শুরু হয়েছিল এভাবেই।
সিলভার ডাক (Silver Duck) : ইনি আরেকটু অভিজ্ঞ। শূন্য রানে আউট হওয়ার ক্ষেত্রে এঁর সম্মান একটু পড়তির দিকে। তাই বোধহয় সোনার বদলে রুপো দিয়েই সম্মান জানানো হয় এই ব্যাটারকে। কারণ প্রথম বলে নয়, ইনি প্যাভিলিয়নের দিকে ফিরে যান দ্বিতীয় বলে আউট হয়ে।
আরও পড়ুন
‘আবার বছর কুড়ি পরে’ : ফিরে দেখা ২০০৩ বিশ্বকাপ
ব্রোঞ্জ ডাক (Bronze Duck) : বোঝাই যাচ্ছে যে ক্রমশ কমছে শূন্য রানে আউটের কৃতিত্ব। এক বা দু’বলে নন, যদি ব্যাটার তৃতীয় বলে শূন্যতে আউট হন, তখন তাকে বলা হয় ‘ব্রোঞ্জ ডাক’।
আরও পড়ুন
ক্রিকেট বিশ্বকাপে ‘নবরস’, কী অর্থ বোঝায় চিহ্নগুলি?
ডায়মন্ড ডাক (Diamond Duck) : নামে হিরে থাকলে কী হবে, এই আউট হওয়ার পদ্ধতি একটু অন্য ধরনের। আগেরগুলির ক্ষেত্রে ব্যাটার তবু বল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, এখানে সেটুকুও জুটবে না। ধরা যাক কোনো ব্যাটার নেমেই স্থান পেয়েছেন নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে। কিন্তু পাকেচক্রে শূন্যতেই রান আউট হয়ে ফিরতে হল তাঁকে। তখন তাঁর সেই শূন্যের নাম ‘ডায়মন্ড ডাক’। একই নিয়ম প্রযোজ্য ‘অবস্ট্রাকশন দ্য ফিল্ড’ বা ‘টাইমড আউট’-এর ক্ষেত্রেও। ফলে এবারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ সেই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হলেন।
রয়্যাল ডাক (Royal Duck) : এই সৌভাগ্যের দাবিদার কিন্তু বিশ্বের সকলে হতে পারবেন না। শুধু অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ‘অ্যাশেজ’ টেস্ট সিরিজের জন্যই বরাদ্দ এই বিশেষ ‘ডাক’। টেস্টের প্রথম বলে আউট হলে পাওয়া যায় ‘রাজকীয়’ সম্মান। ২০২১-এ ব্রিসবেনের গাবায় ইংল্যান্ডের হয়ে ‘ওপেন’ করতে নামেন রোরি বার্নস। কিন্তু ইনিংসের প্রথম বলেই মিচেল স্টার্কের ইন-সুইঙ্গার ছিটকে দেয় লেগ স্ট্যাম্প। একই ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪-র অ্যাশেজে। যখন পার্থে ‘রয়্যাল ডাক’ হয়ে ফেরেন ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুক।
লাফিং ডাক (Laughing Duck) : ব্যাটার যদি শূন্য রানে আউট হন এবং তার সঙ্গেই ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে, তখন তার নাম ‘লাফিং ডাক’। সাধারণত বোলারদের সঙ্গেই বেশি ঘটে থাকে এই ঘটনা। কিংবা শেষ বলে রান তোলার জন্য মরিয়া চেষ্টা করতে গিয়েও আউট হন অনেকে। ফলে একে নিয়ে ‘হাসাহাসি’ করার কারণ একটু অস্পষ্ট বটে।
এ পেয়ার (A Pair) : নামের মধ্যেই যখন ‘পেয়ার’ বা জোড়া বসে আছে, তখন বোঝাই যাচ্ছে টেস্ট ম্যাচে দেখা যায় এর প্রয়োগ। কোনো ব্যাটার যদি এক টেস্টের দুটি ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়ে ফেরেন, তখন তাকে বলা হয় ‘এ পেয়ার’। তবে কত বলে আউট হলেন তিনি, সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
কিং পেয়ার (King Pair) : এখানে কিন্তু বলের বিধিনিষেধ আছে প্রবলভাবে। একই সঙ্গে লজ্জায় মাথা কাটা যাওয়ার মতো অবস্থা ‘কিং পেয়ার’-এ। ব্যাপারটা কী? এক্ষেত্রে ব্যাটার একই টেস্টের দুই ইনিংসেই আউট হয়েছেন ‘গোল্ডেন ডাক’ হিসেবে। অর্থাৎ দু’বারই প্রথম বলে আউট! অনেকেরই নাম আছে এই তালিকায়। যার মধ্যে নিউজিল্যান্ডের ক্রিস মার্টিনস সাতবার ‘কিং পেয়ার’-এর সম্মান নিয়ে রয়েছেন শীর্ষস্থানে। ভারতীয়দের মধ্যে নাম করা যায় ভাগবত চন্দ্রশেখরের।
ব্যাটিং হ্যাটট্রিক (Batting Hat Trick) : বোলারদের কাছে হ্যাটট্রিক যতটা সম্মানের, ব্যাটারের পক্ষে সেটা একেবারেই নয়। কেউ যদি পরপর তিন ম্যাচে শূন্য রানে আউট হন, তখন তাকে বলা হয় ব্যাটিং হ্যাটট্রিক। আর এই তালিকায় সাম্প্রতিক নাম উঠেছে কার জানেন? ভারতের সূর্যকুমার যাদবের। বর্তমানে দারুণ ফর্মে থাকলেও, কিছু মাস আগে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ করেছিলেন কোনো রান না করেই। আর তিনটিই ছিল ‘গোল্ডেন ডাক’।
Powered by Froala Editor