মমতাজ-শোকে কাতর শাজাহানের চোখ ঢাকতে চশমা, উঠছে নিলামে

বেগম মমতাজ মহল মারা যাওয়ায় ভয়ানক ভেঙে পড়েছেন সম্রাট শাজাহান। একটানা বেশ কয়েকদিন কান্নাকাটি করে চোখে রীতিমতো ব্যথা শুরু হয়েছে। রাজবৈদ্য দেখেশুনে বললেন, মৃত বেগমের জন্য অধিক শোকজ্ঞাপনের ফলেই অশুভ শক্তির নজর পড়েছে সম্রাটের উপর। আর তাই তাঁর চোখে পরিয়ে দিতে হবে এক বিশেষ ধরনের চশমা। সাধারণ কাঁচ কেটে সেই চশমা বানানো যাবে না। তাই সুদূর কলোম্বিয়া থেকে আনানো হল বিরাট মাপের দুটি পান্না। সেই পান্না কেটেই তৈরি হল চশমা।

মোঘল আমলের দুই অলৌকিক চশমাকে (Ward off Evil of Mughal Era) ঘিরে এমনই নানা কিংবদন্তি শোনা যায়। নির্মাণকাল মোটামুটি সপ্তদশ শতকের শেষদিক থেকে অষ্টাদশ শতকের শুরুতে। আর সেই দুটি চশমাই সম্প্রতি নিলামে (Auction) তুলতে চলেছে আমেরিকার বাণিজ্যিক সংস্থা সথেবি’জ। আগামী মাসের শেষের দিকেই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গিয়েছে। আর চশমাদুটির মোট আনুমানিক মূল্য স্থির করা হয়েছে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই চশমা তো শুধুই চশমা নয়। সথেবি’জ-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা পৃথিবীতে এমন চশমা আর তৃতীয় নেই। যদিও কিংবদন্তি অনুযায়ী শোনা যায় রোমান সম্রাট নিরো নাকি রক্তপাতের দৃশ্য দেখতে পারতেন না বলে যুদ্ধের সসময় পান্নার লেন্স বসানো চশমা পড়তেন। ইংল্যান্ডের নানা রাজারও এমন কাহিনি শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে সেসব উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মোঘল সাম্রাজ্যের এই চশমাদুটি কিন্তু ইতিহাসের জলজ্যান্ত দলিল।

দুটি চশমার একটিতে ব্যবহার করা হয়েছে হীরের লেন্স। অন্যটিতে পান্নার লেন্স। পান্নাটি আনা হয়েছিল সুদূর কলোম্বিয়া থেকে। কলোম্বিয়ার খনি থেকে সেই পান্না পৌঁছায় পর্তুগালে। সেখান থেকে আসে ভারতে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, অন্তত ২০০-৩০০ ক্যারাট ওজনের পান্না থেকে লেন্সদুটি তৈরি করা হয়েছে। আর হীরেটির আয়তনও ছিল একইরকম। তবে সেটা অন্ধ্রপ্রদেশের গোলকোণ্ডা খনি থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিল। মোঘল আমলের আগে থেকেই ভারতে চশমার প্রচলন ছিল। এমনকি মোঘল আমলে সামগ্লাসের ব্যবহারও শুরু হয়ে যায়। সম্রাট শাজাহানেরই ৫টি সানগ্লাস ছিল বলে শোনা যায়। তবে রত্ন-পাথর কেটে লেন্স তৈরি করা সত্যিই অবাক করে। কাজটা সহজ তো নয়ই, তার ওপর কোথাও একটু ভুল হলে সম্পূর্ণ পাথরটিই নষ্ট হবে। ভারতের বাইরে আর কোথাও এমন সূক্ষ কাজের উদাহরণ পাওয়া যায়নি।

দুইজোড়া লেন্স ছাড়াও চশমাদুটিতে খোদাই করা রয়েছে অসংখ্য ছোটো ছোটো হীরে। সেগুলিও গোলকোণ্ডা খনিরই হিরে। সব মিলিয়ে এমন সম্পদের দাম হয়তো সত্যিই মুদ্রা দিয়ে মাপা যায় না। নিলামের অঙ্কে শেষ পর্যন্ত তা কোথায় পৌঁছায়, সেটা জানা যাবে আগামী মাসেই।

Powered by Froala Editor

Latest News See More