যতদূর দেখা যায়, শুধু বরফ আর বরফ। জমাট বেঁধে রয়েছে গোটা লেকের জল। তবে লেকের একেবারে মাঝখানে যেন বরফের মধ্যে আটকে রয়েছে কিছু একটা। দূর থেকে খানিকটা অস্পষ্টই। তবে আরেকটু ভালো করে দেখতেই বোঝা গেল, সেখানে ছটফট করছে একটি ছোট্ট হরিণ শাবক। দাঁড়ানোর সামর্থ্যটুকু নেই পিচ্ছিল বরফের ওপর। শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুই মৎস্যজীবী উদ্ধার করেন হরিণ শাবকটিকে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ঝুঁকিপূর্ণ বরফজমা লেকে হরিণ শাবকটির উদ্ধারকার্যের ভিডিও। আর তাঁদের এই মানবিক উদ্যোগে মুগ্ধ নেটিজেনরা।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ ডিসেম্বর। শীতকালে জমে থাকা লেকের বরফ কেটে গর্ত করে মাছ শিকার করেন যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্যজীবীরা। অন্যদিনের মতো ব্র্যানসেন জ্যাকসন এবং তাঁর বন্ধু এদিন হাজির হয়েছিলেন ইউটা প্রদেশের প্যাঙ্গুইচ লেকে। উদ্দেশ্য ছিল মৎস্য শিকার। তবে ঘটনাস্থল পৌঁছেই চমকে ওঠেন তাঁরা। জীবনের পরোয়া না করেই ব্র্যানসেন সিদ্ধান্ত নেন হরিণটিকে উদ্ধার করার।
রাবারের বুট পরেই বরফে ওপর দীর্ঘ পথ হেঁটে তিনি পৌঁছে যান হরিণটির কাছে। তবে শুনতে এমন লাগলেও, ততটা সহজ ছিল না কাজটা। যাওয়ার পথেই বরফের চাদর ভেঙে লেকে পা ঢুকে যায় ব্র্যানসেনের। সামান্যের জন্য বিপত্তির হাত থেকে রেহাই পান তিনি। তবে তারপরেও পিছিয়ে আসেননি এই মার্কিন মৎস্যজীবী।
ব্র্যানসেন কাছে পৌঁছাতেই শান্ত হয়ে যায় হরিণ শাবকটি। থামিয়ে দেয় পালানোর প্রচেষ্টা। ছোট্ট শাবকটিও যেন বুঝতে পেরেছিল, এই দুর্গম পরিস্থিতিতে তাঁকে উদ্ধার করতেই এসেছেন স্বয়ং দেবদূত। হরিণটিকে কোলে তুলে প্রথমে আশ্বস্থ করেন ব্র্যানসেন। তারপর বরফ-জমা লেক অতিক্রম করে পাড়ে এসে ছেড়ে দেন তাকে। ঠাণ্ডায় এতটাই কাহিল হয়ে পড়েছিল শাবকটি যে শক্ত পাথুরে জমিতেও দৌড়াতে পারছিল না সেটি।
ব্র্যানসেন জানান, নিকটবর্তী অরণ্য থেকে প্রায়শই এই লেকে জল খেতে আসে হরিণ। সেই কারণেই হয়তো এসেছিল মিউল ডিয়ার প্রজাতির হরিণ শাবকটি। জলের সন্ধান করতে লেকের গভীরে যেতেই বরফের ফাঁদে আটকে যায় সেটি। পুরো ঘটনাটির ভিডিও করেন তাঁর বন্ধু। অবশ্য লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে নয়। ব্র্যানসেনকে মানসিক ভরসা দিতে তিনিও অতিক্রম করেছেন এই পিচ্ছিল পথ। পাশে থেকেছেন বন্ধুর। ৩১ ডিসেম্বর এই ভিডিও ব্র্যানসেন প্রকাশ করার পরেই, চাঞ্চল্য পড়ে যায় নেট দুনিয়ায়। এভাবে অসহায় বন্যপ্রাণীর রক্ষা করায় অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন দুই মৎস্যজীবীকে...
আরও পড়ুন
ফিরে দেখা ২০২০ : জীববিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত উল্লেখযোগ্য নতুন প্রজাতি
Powered by Froala Editor