একটা আণুবীক্ষণিক জীব। স্বাধীনভাবে বাঁচতেও পারে না। আর সে-ই কিনা গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে রেখেছে! কথা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের সম্পর্কে। গত ডিসেম্বর থেকে যার সংক্রমণ শুরু হয়েছে, আর আজও চলছে সমান তালে। কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না। কিন্তু কেন? এই ‘কেন’র উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। ভাইরাসটিকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সেখান থেকেই উঠে আসছে এমন কিছু তথ্য, যা রীতিমতো আশ্চর্য করে দিচ্ছে সবাইকে।
‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর দুই বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধানকুমার বিশ্বাস এই গবেষণা করে যাচ্ছেন। সেখান থেকে এখনও অবধি যা যা তথ্য পেয়েছেন, সেই সবটা তুলে ধরেছেন নিজেদের রিসার্চ পেপারে। যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ। সেখানেই তাঁরা দেখিয়েছেন, কীভাবে নিজেদের চরিত্র বদলে বারবার আমাদের সামনে আসছে করোনা। আর এই ভাইরাসের কোন প্রজাতিটিই বা বেশি সংক্রামক?
যে করোনা ভাইরাসটির কথা বলা হচ্ছে, বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম ‘সার্স-কোভ-২’। ডিসেম্বরের শেষের দিন যখন গোটা বিশ্ব নতুন বছর উদযাপনের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন চিনের উহান প্রদেশে এই ভাইরাসের জন্যই প্রথম কেউ মারা যান। সেই থেকে শুরু হয়েছিল মৃত্যু মিছিল। আর আজ সেই সংখ্যাটা দুই লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমন মারণ আকার নিল কেন? আর এখনও কিছু প্রতিষেধক কেন সামনে আসছে না? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ওই গবেষকদ্বয় করোনা ভাইরাসের একটি বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর রাখতে বলেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি ভাইরাসের দেহেই জিনোম হিসেবে হয় ডিএনএ অথবা আরএনএ থাকে। করোনা একটি আরএনএ ভাইরাস। সেজন্য এই ভাইরাসগুলির জিনোম মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে যায়। প্রতিকূল পরিবেশ দেখলেই আরএনএ’র চরিত্র বদলে যায়। নিজের বেঁচে থাকার জন্যই এই জিনিসটি করে করোনা ভাইরাস; কিন্তু সেটাই আমাদের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর।
ঠিক এর জন্যই এখনও পর্যন্ত মোট ১১ রকমের করোনা ভাইরাসের প্রকার পাওয়া গেছে। বিভিন্ন নামে চিহ্নিতও করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ‘ও’ করোনা ভাইরাসটিই সবার প্রথমে চিনে থাবা বসিয়েছিল। আর এখন সবথেকে বেশি ত্রাস সৃষ্টি করছে ‘এ২এ’ করোনা। গবেষকরা বলছেন, সময় যত এগিয়েছে; এই ‘ও’ করোনা থেকেই বাকি দশটি তৈরি হয়েছে। এবং যত দিন যাচ্ছে, এরাও নিজেদের চরিত্র বদলাচ্ছে। এতবার পরিবর্তন করার কারণেই প্রতিষেধক তৈরি হতে এত সময় লাগছে। গবেষক পার্থপ্রতিম মজুমদার ও নিধানকুমার বিশ্বাস এখনও কড়া নজর রেখে চলেছেন করোনার দিকে। গবেষণা এখনও চলছে। আরও কী কী নতুন তথ্য সামনে আসে, দেখা যাক।