গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার স্বীকৃতি, ইএমবিও-র ‘ইয়ং লিডার’ দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

ভারতের মতো দেশে বৈজ্ঞানিক মেধা যতই থাকুক, গবেষণার উপযুক্ত পরিকাঠামোর যে যথেষ্ট অভাব রয়েছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রেই শোনা যায়, মেধাবী গবেষকরা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। কিন্তু সেই প্রলোভন জয় করেও যাঁরা দেশের মাটিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের বিভিন্ন আবিষ্কারের গুরুত্বও নেহাৎ কম নয়। সম্প্রতি ভারত এবং সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান থেকে এমনই ৮ জন বিজ্ঞানীকে বেছে নিয়েছে ইউরোপিয়ান মলিকিউলার বায়োলজি অর্গানাইজেশন (European Molecular Biology Organization)। আর এই ৮ জন জীববিজ্ঞানীর মধ্যে রয়েছেন দুজন বাঙালি বিজ্ঞানীও। ভারতীয় বিজ্ঞানীর সংখ্যা মোট ৪ জন।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের গবেষক শ্রীমন্ত গায়েন। তাঁর গবেষণার বিষয় মূলত জিন গবেষণা। ক্যানসারের মতো রোগের প্রকোপ মোকাবিলার পাশাপাশি সম্প্রতি তাঁর অন্য একটি গবেষণা যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আর এই গবেষণার বিষয় ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি। নানারকম শারীরিক সমস্যার কারণে অনেক মহিলারই সন্তান ধারণে সমস্যা দেখা দেয়। তখন ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনই ভরসা। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে সন্তানের জন্ম হল সে পুরুষ। এই লিঙ্গবৈষম্যের কারণ সম্বন্ধে বহুদিন অন্ধকারে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। শ্রীমন্ত দেখিয়েছেন, চিকিৎসার সময় ব্যবহৃত নানা ওষুধের প্রভাবেই এক্স ক্রোমোজমের সংকোচন ঘটে। এমনকি এইসমস্ত ওষুধের জন্য আইভিএফ পদ্ধতির সাফল্যের হারও কম। এই গবেষণা আইভিএফ পদ্ধতির সাফল্য তো বাড়াবেই, তার সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধেও এক সদর্থক পদক্ষেপ।

অন্যদিকে বেঙ্গালুরুতেই ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সে গবেষণা করেন হিয়া ঘোষ। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের নানা অভিব্যক্তির সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক স্থাপন করতে চান তিনি। পাশাপাশি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শনাক্ত করে বিভিন্ন প্রাণী কীভাবে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, তাও বুঝতে চান তিনি। শ্রীমন্ত এবং হিয়া, দুজনের গবেষণাকেই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ইএমবিও। এঁরা দুজন ছাড়াও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের আরও দুই বিজ্ঞানী রামরায় ভট্ট এবং সন্দীপ ঈশ্বরাপ্পার নাম রয়েছে তালিকায়।

২০১৯ সাল থেকেই তৃতীয় বিশ্বের নানা দেশের তরুণ গবেষকদের গবেষণায় সাহায্য করার জন্য ‘ইয়ং লিডারশিপ’ নামক প্রকল্প চালু করে ইএমবিও। এই প্রকল্পে বাছাই করা বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্য বিশেষ অর্থসাহায্যের পাশাপাশি কীভাবে অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর মধ্যে গবেষণা করা হয় তার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে কর্তৃপক্ষ। এবারে ৩৮ জন আবেদনকারীর মধ্যে থেকে মাত্র ৮ জনকে বেছে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর তার মধ্যেই স্থান পেয়েছেন ২ জন বাঙালি বিজ্ঞানী। আগামী ৪ বছর তাঁদের সমস্ত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকবে ইএমবিও। বিজ্ঞান গবেষণায় বাঙালির সাফল্য যে আজও অব্যাহত রয়েছে, সেটাই আরেকবার প্রমাণিত হল।

আরও পড়ুন
যুদ্ধের ব্যয় কমিয়ে বিনিয়োগ হোক পরিবেশ-সমস্যায়, দাবি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীদের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চের্নোবিলকে বিষমুক্ত করবে প্রযুক্তি, পথ দেখালেন সুইস বিজ্ঞানীরা

Latest News See More