টোকিও-য় আফগানিস্তানের দুই খেলোয়াড়, প্যারালিম্পিক মঞ্চে রূপকথার জন্ম

শেষ পর্যন্ত টোকিও প্যারালিম্পিকে আফগানিস্তান অংশ নিতে পারবে, তা অনেকেই কল্পনা করেননি। বেশ কিছু সংস্থার তৈরি ক্রীড়াসূচিতেও স্পষ্ট লেখা হয়, আফগানিস্তান এ-বছর প্যারালিম্পিকে অংশ নিচ্ছে না। যদিও আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটির তালিকা থেকে একবারও বাদ যায়নি আফগানিস্তানের নাম। কোথাও যেন একটা আশা ছিলই। আর অবশেষে সেই প্রত্যাশা পূরণ হল। শনিবার রাতে টোকিও পৌঁছলেন আফগানিস্তানের দুই খেলোয়াড় জাকিয়া খোদাদাদি এবং হোসেন রুসোলি। জাকিয়া অংশ নেবেন মহিলা তাইকোন্ডু ম্যাচে এবং হোসেন পুরুষদের ৪০০ মিটার রেসে। টোকিও অ্যাথলিট ভিলেজে তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ।

তালিবান বাহিনী আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল অধিগ্রহণ করলে সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশজুড়ে নেমে আসে দুশ্চিন্তার মেঘ। বহু মানুষ আফগানিস্তান ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে গিয়েছেন। জাকিয়া এবং হোসেনও যেন বুঝতে পেরেছিলেন, আফগানিস্তানে থাকলে কোনোভাবেই টোকিও পৌঁছতে পারবেন না তাঁরা। তাই পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ফ্রান্সে। যদিও সংবাদ মাধ্যমের থেকে এই খবর গোপন রাখা হয়। প্যারিসের সরকারি স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে তাঁদের। দুজনেই কাতরভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন প্যারালিম্পিক কমিটির কাছে, যে কোনো মূল্যে তাঁরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান। অবশ্য প্যারালিম্পিক কমিটির মতে, তাঁরা সবার আগে খেলোয়াড়দের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে চেয়েছিলেন। তাই টোকিও পৌঁছানোর বিষয়ে তাড়াহুড়ো করেননি তাঁরা।

শনিবার জাকিয়া এবং হোসেনের টোকিও পৌঁছানোর খবরে চমকে উঠেছিলেন সকলেই। প্যারালিম্পিক কমিটি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা বরাবরই জানতেন এই প্যারালিম্পিকেও আফগানিস্তানের অংশগ্রহণের একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই সম্ভাবনার কারণেই মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরাই আফগানিস্তানের পতাকা বহন করেছেন। যদিও জাকিয়া বা হোসেন, কেউই তখনও ফ্রান্স পৌঁছতে পারেননি। তাঁরা প্যারিসে পা রেখেছেন বুধবার সকালে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের এই অংশগ্রহণ যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনই ঐতিহাসিক জাকিয়ার অংশগ্রহণ। ২৩ বছরের জাকিয়া প্যারালিম্পিকে আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা প্রতিনিধি। তালিবান শাসনের মধ্যেও ইতিহাস তৈরি করছেন তিনি। হয়তো এরপরেও পদকজয়ের প্রত্যাশা থেকে দূরে থেকে যাবে আফগানিস্তান। দুই খেলোয়াড়ও জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন এটাই সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি। এর থেকে বড়ো কোনো ইতিহাস তৈরির প্রত্যাশা এখনই রাখতে চান না তাঁরা। প্যারালিম্পিক কমিটিও চাইছেন মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকুন তাঁরা। অহেতুক প্রত্যাশার চাপ যেন না পড়ে তাঁদের উপর। তবে এই ইতিহাসকে যে পদকজয়ের মাপকাঠিতে মাপা যায় না, সে-কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

Powered by Froala Editor

Latest News See More