সেরে ওঠার আগেই আঘাত, ভরা কোটালে বাঁধ ভেঙে আবার জলমগ্ন দুই চব্বিশ পরগনা

আমফান তছনছ করে গেছে দু’সপ্তাহ আগে। বাসস্থান কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষের। কেড়ে নিয়েছে জীবিকাও। তবে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর যে লড়াইটা শুরু হয়েছিল সুন্দরবনসহ দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে, তা আবারও প্রকৃতির রোষানলে পড়ল।

গতকাল ছিল পূর্ণিমা। ভরা কোটাল। ফলে জোয়ার জলে ফুঁসেছে দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলি। আমফানের তাণ্ডবের তিন-চার দিন পরেই শুরু হয়েছিল বাঁধগুলি সারাই এবং নির্মাণের কাজ। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ বা দশ দিনের সময় একেবারেই যথেষ্ট নয় একটি বাঁধ তৈরির জন্য। ফলে জোয়ারের জলেই ভেসে গেছে সেই কাজও।

আরও পড়ুন
সুন্দরবনকে পরিবেশ দিবসের ‘উপহার’, ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপণের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর

হাসনাবাদ, টিঁয়ামারি, খলিশাখালি এসব অঞ্চল এমনই ভাঙনসংকুল। আর ভরা কোটালে শোচনীয় অবস্থা অঞ্চলগুলিতে। আশঙ্কাগ্রস্ত বিস্তীর্ণ এলাকা। অনেক জায়গাতেই ভেঙে গেছে নির্মীয়মান বাঁধগুলি। যেমন গোসাবা, হাসনাবাদ, মিনাখা, রাঙাবেলিয়া, সন্দেশখালি প্রভৃতি জায়গায় অবস্থা ভয়ঙ্কর। কোথাও কোথাও কোমর অবধি জল। যেসব বাড়িগুলি এখনও অন্তত জলের নিচে ছিল, সেগুলিতেও ঢুকেছে জোয়ারের জল। ক্রমাগত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে মাটির বাড়িগুলি। স্রোতের ধাক্কায় ভেঙে পড়তে পারে একাধিক বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত ২০টির বেশি গ্রাম। কিছু জায়গায় কোটালের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও জারি থাকলেও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ার।


আরও পড়ুন
ভাঙা বাঁধ, ওইপারে বাঘ, এইপারে মানুষ আর মাঝে মাতলা: সুন্দরবন থেকে সরাসরি

মিনাখার হরিণহুলা এবং মোহনপুরের অবস্থা যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। হরিণহুলা গত দু’একদিন আগেও জলমগ্ন থাকার দরুণ অনেকে বাড়ির ছাদেই দিন কাটাচ্ছিলেন। কোটালের হানায় এখন পুরোপুরিই জলের তলায় সেই অঞ্চলগুলি। খারাপ অবস্থা মোহনপুরেও। সেখানকার বাসিন্দা বুলবুল দাস একজন আশা কর্মী। ফলে তাঁর কাছেই সরকারের তরফ থেকে আসে ওষুধ। এলাকায় ওষুধের সরবরাহ করেন তিনিই। গতকাল কোটালের জলে ভেসে গেছে তাঁর বাড়িও। জলের তলায় ওই এলাকার একাধিক পোলট্রি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে মৎস্যব্যবসা এবং চাষাবাদ। মৌসুনিতেও ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে ভরা কোটাল।

আরও পড়ুন
ঝড়ে সর্বস্ব হারিয়েও আবার বাঁধ তৈরিতে ব্যস্ত সুন্দরবনের গ্রামবাসীরা, দেখুন ভিডিও

আমফানের আঘাত এতটাই গভীর যে, ঝড়ের এতদিন পরেও অনেকে ফিরতে পারেননি নিজেদের বাড়িতে। সাইক্লোন সেন্টারগুলিতে অথবা স্থানীয় সরকারি স্কুলগুলিতেই তাঁদের ব্যবস্থা হয়েছে থাকার। বন্দোবস্ত করা হচ্ছে খাবারের। যদিও অনেক জায়গাতেই অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহ হচ্ছে না রিলিফ সেন্টারগুলিতে। বাঁধ মেরামতির কাজ খানিকটা এগিয়েছিল বলেই তাঁরা আশায় ছিলেন সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বাসস্থান ফিরে পাবেন বলে। তবে পূর্ণিমার ভরা কোটাল জল ঢেলে দিয়েছে সেই সম্ভাবনায়। 




আরও পড়ুন
আমফানের আক্রমণ কমাল সুন্দরবন, আরও বড়ো তাণ্ডবের হাত থেকে রক্ষা দুই বাংলার

শুধু পূর্ণিমা কাটলেই বিপদ পেরিয়ে যাবে এমনটা নয়। আজ প্রতিপদ। তারপর প্রথম, দ্বিতীয়া অবধি বজায় থাকবে নদীগুলির এই ভয়াল রূপ। আর এই দু’-তিন দিনে যে পরিমাণ জল ঢুকবে এলাকাগুলিতে, ক্ষতিসাধিত হবে যে মাত্রায় তা সারিয়ে তুলতে সময় লেগে যেতে পারে কুড়ি-পঁচিশ দিন কিংবা এক মাস। ততদিনে জলের তলায় থেকে বাসযোগ্য থাকবে না ঘর-বাড়িগুলিও। ঝড়ের দু’-সপ্তাহ পরেও এমনই প্রতিকূলতার অন্ধকারেই ডুবে সুন্দরবন। ক্রমাগত একের পর এক ঝড়ের সঙ্গে চলছে জীবনের লড়াই...




আরও পড়ুন
শিক্ষক থেকে হয়ে উঠেছিলেন অভিভাবক, সুন্দরবন হারাল তার ‘রূপকার’কে

Powered by Froala Editor