কুলোর মতো কান আর মুলোর মতো দাঁত, হাতিদের তো এভাবেই চিনি আমরা। কিন্তু যদি শোনা যায়, হাতিদের সেই দাঁতই আর থাকছে না! না, কোনো দুর্ঘটনার কারণে নয়, বরং বিবর্তনের নিয়মেই দাঁত বিসর্জন দিতে চলেছে আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলের হাতিরা। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। যদিও এই ঘটনার পিছনেও চোরাশিকারীদের (Poachers) ভূমিকা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। বিগত কয়েক দশক ধরে লাগামহীনভাবে হাতিদের দাঁত কেটে নিয়েছেন তাঁরা। দাঁতের জন্য হত্যাও করা হয়েছে বহু হাতিকে। আর সেই কারণেই আত্মরক্ষার খাতিরে হাতিদের শরীরে এই অদ্ভুত বিবর্তন (Evolution) ঘটছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছিল, সাভানা অঞ্চলের বেশ কিছু মহিলা হাতির দাঁত দেখা যাচ্ছে না। জন্মের পর কখনোই তাদের বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা দাঁতদুটি গজিয়ে উঠছে না। আর এই বিষয়টি নিয়েই গবেষণা করছিলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মোজাম্বিকের গোরাংসা ন্যাশনাল পার্কের প্রায় অর্ধেক মহিলা হাতিই জন্মেছে দাঁত ছাড়া। বিষয়টি নিছক ব্যতিক্রম নয়, বরং তাদের জিনপুলের মধ্যেই মিউটেশন ঘটে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। আর এর কারণ লুকিয়ে আছে বেশ কয়েক দশক আগের ইতিহাসের মধ্যে।
১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলের প্রায় ৯০ শতাংশ হাতিকে মেরে ফেলা হয়েছিল। আর তার কারণ ছিল হাতিদের মূল্যবান দাঁতগুলি। এই সময় ঠান্ডা যুদ্ধের খরচ মেটাতে আমেরিকা নিরীহ পশুগুলিকেই বলি দিয়েছিল। ঠাণ্ডা যুদ্ধ থেমে গেলেও হাতিশিকার বন্ধ হয়নি। বহু সংরক্ষণ প্রকল্প নেওয়ার পরেও চোরাশিকার থামানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত তাই হাতিরা নিজেদের আত্মরক্ষার পথ বেছে নিল নিজেরাই। তাদের দাঁত যদি না থাকে, তাহলে শিকারীরাও আক্রমণ করবে না। দেখা গিয়েছে, ১৯৭৭ সালের আগে মাত্র এক পঞ্চমাংশেরও কম মহিলা হাতি দাঁত ছাড়া জন্মাত। এই কয়েক বছরে সেই সংখ্যাটা বেড়ে ৫০ শতাংশ হয়ে উঠেছে। এমনকি গবেষকদের মতে, অন্তত দেড়শো বছর পিছিয়ে গেলে দেখা যাবে দাঁতবিহীন কোনো হাতির কল্পনাই করা যেত না।
আরও পড়ুন
হাতিদের জন্য অনাথালয়, বিশ্বে প্রথম
তবে আত্মরক্ষার এই উপায়ও পুরোপুরি নিরাপদ নয় বলে মত গবেষকদের। মহিলা হাতিদের এক্স ক্রোমোজমে এই মিউটেশন ঘটেছে। অন্যদিকে পুরুষরা একইভাবে দাঁত নিয়ে জন্মাচ্ছে। এর ফলে পুরুষরাই মুখ্যত চোরাশিকারীদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হবে। তাছাড়া মাতৃগর্ভেও পুরুষ শাবকদের নানারকম সমস্যা হতে পারে বলে মত তাঁদের। ফলে শেষ পর্যন্ত বংশবৃদ্ধির গতিই হ্রাস পাবে। যদিও মিউটেশনের এই প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার কোনো পথ জানা নেই।
আরও পড়ুন
হাতিমৃত্যু রুখতে ৯টি বিশেষ করিডর আসামে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আসামের ১৮টি হাতির মৃত্যু কি প্রকৃতির গ্রাসেই? মানুষের দিকে ইঙ্গিত গবেষকদের