বয়স বেড়েছিল নিজের মতোই। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এতটুকুও কমেনি ফুটবল মাদকতা। নিজের শহরের ফুটবল দলকে সমর্থন করতে প্রায় সব ম্যাচেই রোদ-জল মাথায় নিয়েই স্টেডিয়ামে হাজির হতেন তাঁরা। প্রয়াত সেই ফুটবল-পাগল দম্পতিকে এবার অভিনব শ্রদ্ধা জানাল তুর্কির ফুটবল ক্লাব ফেনেরবাখ।
মিস্টার মুমতাজ এবং মিস্ট্রেস ইহসান— তুর্কির ফুটবল মহলে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই তুর্কি দম্পতি। ফেনেরবাখের অন্যতম সমর্থক ছিলেন তাঁরা। সপ্তাহান্তে ক্লাবের ঘরোয়া স্টেডিয়াম সুকরু সারাকোগলুতে একটি ম্যাচেও অনুপস্থিত থাকতেন না এই দুই অশীতিপর ফুটবলপ্রেমী। একেবারে যৌবনকাল থেকেই চলে আসছে এমনটা। ক্লাবের হার হোক কিংবা জয়— সমস্ত মুহূর্তেই নিশ্চুপে তাঁরা পাশে থেকেছেন ক্লাবের। গলা ফাটিয়েছেন ফেনেরবাখের খেলোয়াড়দের উদ্যম জোগাতে।
২০১৬ সালে প্রয়াত হন মিস্টার মুমতাজ। তারপরেও ইহসানের মাঠে আসায় ছেদ পড়েনি। অতীতের ধারা বজায় রেখেই সব ম্যাচে একাই খেলা দেখতে আসতেন ইহসান। হাতে থাকত পরিচিত হলুদ-কালো পতাকা। তবে একটা নয়, স্বভাবের বশে কাটতেন দুটো টিকিট। হৃদয়বিদারক সেই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল গত বছর পর্যন্তও। আর তারপরই মহামারীর ধাক্কায় থেমে যায় সারা পৃথিবীর ফুটবল-মহল।
বিগত কয়েকমাস দর্শকশূন্য মাঠেই চলছে ফুটবল। ইউরোপের অন্যান্য দলের মতো সবুজ ঘাসে লড়াই করতে নেমেছে ফেনেরবাখ ফুটবল ক্লাবও। এসবের মধ্যেই ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে এসেছিল খবরটা। গ্যালারিতে আর কোনোদিনই ফিরবেন না ক্লাবের অন্ধ সমর্থক ইহসান। করোনা মহামারীই কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রাণ।
গত ১৪ ডিসেম্বর ঘরের মাঠে ইয়েনি মালাত্যাস্পোরের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে বৃদ্ধ-দম্পতিকে বিরলতম সম্মাননা জানাল তুর্কির এই ক্লাবটি। দর্শকশূন্য গ্যালারি আলো করেই উপস্থিত থাকলেন মুমতাজ এবং ইহসান। প্রমাণ সাইজের কার্ডবোর্ডের প্রতিকৃতি স্থাপন করেই পুরনো দিনগুলোকে যেন এক ঝটকায় ফিরিয়ে দিল হলুদ-কালো ব্রিগেড। ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া পেজেও প্রাচীনতম এই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে ফেনেরবাখ।
১৪ তারিখ রাতের ম্যাচে মালাত্যাস্পোরের কাছে ৩-০ গোলে হেরে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান থেকে বিচ্যুত হয় ফেনেরবাখ। কিন্তু একটা হার যে শেষ কথা হতে পারে না, তেমনটাই বিশ্বাস করতেন মুমতাজ-ইহসান। হারের পরেও হাসিমুখে হাজির হতেন গ্যালারিতে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামীতেও মুমতাজ এবং ইহসানের জন্য সংরক্ষিত হবে গ্যালারির দুটি সিট। রাখা হবে কার্ডবোর্ডের প্রতিকৃতি। ক্লাবের শেয়ার করা অশীতিপর দম্পতির এই ছবি জল এনে দিয়েছে সারা পৃথিবীর ফুটবলপ্রেমীদের চোখে। এ যেন ফুটবলের প্রতি এক অমর ভালোবাসার গল্প...
আরও পড়ুন
২০২২ পর্যন্ত অলিম্পিক এবং ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে নির্বাসন রাশিয়ার
Powered by Froala Editor