মানুষের ক্রিয়াকলাপ পরিবেশের জন্য গভীর সংকট ডেকে আনছে। আর সেই সংকটের আঁচ এসে পড়ছে মানুষের উপরেও। প্রকৃতি নিজেই বা আর কতদিন সহ্য করবে? গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, আর বিনিময়ে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাহায্যে চালায় সালোকসংশ্লেষ। এই কথা আমরা ছোটো থেকেই জেনে এসেছি। তাই পৃথিবীর গভীর বনাঞ্চলগুলিকে এতদিন অক্সিজেনের উৎস হিসাবেই চিনতাম। আর আমাজনের জঙ্গল তো পৃথিবীর ফুসফুস বলে পরিচিত। কিন্তু এই সব সমীকরণই উল্টে যেতে চলেছে। ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনভূমি আর অক্সিজেনের উৎস তো নয়ই, কয়েক দশকের মধ্যেই তা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎসে পরিণত হতে চলেছে। এমনটাই জানাচ্ছে গবেষণা।
আরও পড়ুন
অনিয়মিত বর্ষা, দায়ী সুন্দরবনের বাতাসে কার্বনের আধিক্য
অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষছেদন তো ছিলই। তার উপর গত এক বছরে বীভৎস অগ্নিকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে আমাজন, কঙ্গো, সুমাত্রার মতো ক্রান্তীয় বনভূমিকে। আর এইধরনের অগ্নিকাণ্ডের পিছনেও মানুষের ক্রিয়াকলাপকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। এইসব ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিল, অরণ্যের চরিত্র বদলাচ্ছে। তবে সেই বদল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সে সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা ছিল না বললেই চলে।
আরও পড়ুন
১০ বছরে ১৫ কোটির বেশি চারা লাগিয়ে বিলুপ্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্য ফিরিয়ে দিলেন হায়দার
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইমন লুইসের গবেষণায় সেই পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর গতিপ্রকৃতিই উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বিগত তিন দশকে পাল্লা দিয়ে কমেছে বনাঞ্চলে কার্বন অধিগ্রহণের পরিমাণ। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী তিন দশকের মধ্যে জঙ্গলগুলিই হয়ে উঠবে কার্বনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
১৯৯০ এর দশকে যেখানে বায়ুমণ্ডলের ১৭ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিত ক্রান্তীয় বনভূমিগুলি, গত দশকে সেই পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ শতাংশে। ফলে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে করছেন অধ্যাপক লুইস।
আরও পড়ুন
নিজের প্রচেষ্টায় ৩০০ একর জুড়ে বনাঞ্চল তৈরি করেছেন এই ব্যক্তি
এই বদলে যাওয়া চরিত্রকে আটকাতে গেলে কারখানা থেকে কার্বন অপসারণের পরিমাণ তো কমাতেই হবে, সেইসঙ্গে জোর দিতে হবে বনভূমির সম্প্রসারণেও। নাহলে প্রকৃতি পরিবেশের যে বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে, তার অভিঘাত থেকে আমরা কেউই রেহাই পাব না। বাতাসে কার্বনের পরিমাণ তো বাড়ছেই, সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। আর সব মিলিয়ে বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা যে পরিমাণে বাড়ছে তাতে কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রত্যেকের। এই আসন্ন সংকটের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় বনভূমির সংরক্ষণ।