ভারত থেকে বিলুপ্তির পথে আরও একটি উপজাতি সম্প্রদায়

ত্রিপুরা রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র একটি উপজাতি কারবং (Karbong Tribe)। এমনকি সরকারি খাতায় আস্ত উপজাতির সম্মানটুকুও মেলেনি। হালাম উপজাতির মানুষদের সঙ্গে জুড়ে নিয়ে তাঁদের উপ-উপজাতির তকমা দেওয়া হয়েছে। যদিও ভাষাগত পার্থক্যই প্রমাণ করে তাঁদের পৃথক অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকি ত্রিপুরার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রয়েছে এই কারবং উপজাতির মানুষদের। তবে সেই উপজাতিই এবার হারিয়ে যেতে বসেছে। সোমবার ত্রিপুরা হাইকোর্টের (Tripura HC) সামনে এমনই রিপোর্ট পেশ করল বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি।

কারবং উপজাতির পৃথক জাতিসত্তার অধিকার এবং সংরক্ষণের দাবি নিয়ে একটি মামলার প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা হাইকোর্ট এই কমিটি তৈরির নির্দেশ দেয়। আর তার রিপোর্টে দেখা যায়, বর্তমানে গোটা রাজ্যে কারবং উপজাতির মানুষের সংখ্যা বড়োজোর ২৫০। এমনকি তাঁদেরও অনেকে মূল জনজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন। অথচ একসময় ত্রিপুরার রাজপরিবারের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন কারবংরা। দেববর্মা রাজাদের পারিবারিক পুজো থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানে পরিচালনার দায়িত্ব থাকত তাঁদের উপরেই। এই কারণেই ত্রিপুরার অন্যান্য উপজাতিদের সঙ্গে দূরত্বও তৈরি হয়েছিল কারবং মানুষদের। তাঁদের ধর্মীয় আচরণেই তাই হিন্দু ধর্মের প্রভাব স্পষ্ট। এমনকি ত্রিপুরার প্রায় সমস্ত উপজাতি কোকবরক ভাষায় কথা বললেও কারবংদের ভাষা আলাদা।


স্বাধীনতার আগে দেববর্মা বংশের রাজারা কারবং উপজাতির উন্নয়নের বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁদের জন্য বিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনাও হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেইসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাধীনতার পর রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা হারাল এই উপজাতি। এমনকি তাঁদের আলাদা উপজাতির স্বীকৃতিটুকুও দেওয়া হল না। অবশ্য ১৯৮৯ সাল নাগাদ কারবং অধ্যুষিত অঞ্চলে একটি সরকারি স্কুল তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৯৩ সাল নাগাদ সেই স্কুলে পঠনপাঠনও শুরু হয়। অবশ্য মাত্র ৩ জন শিক্ষক, এবং পড়ুয়ার সংখ্যাও মাত্র ১৫। সেই স্কুলও বেশিদিন চলেনি। এছাড়াও চিকিৎসা পরিষেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সবকিছু থেকেই বঞ্চিত থেকেছেন তাঁরা। আর এই কারণেই ক্রমশ কারবং উপজাতির মানুষরা নিজেদের আরণ্যক গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। উপজাতির মহিলারাও অন্য জনজাতির মানুষদের বিবাহ করছেন। একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি এবং ভাষাও। মাত্র ৬০-৭০টি পরিবারে ২৫০ জনেরও কম সদস্য টিকে রয়েছেন এখন। আদালতের নির্দেশ আর সরকারি উদ্যোগ কি শেষ পর্যন্ত বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারবে কারবং উপজাতিকে?

আরও পড়ুন
ঠোঁট ফুঁড়ে বসানো মাটির চাকতিই ‘অলংকার’ এই উপজাতি সম্প্রদায়ের!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
২৫০ বছর পর উপজাতিদের হাতে ফিরছে অরণ্যের অধিকার