সীমান্তের ওপারে তখন খানসেনাদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর এপারে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ত্রিপুরাও। আগরতলা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার নানা নিদর্শন। কিন্তু শহরকে স্মার্ট সিটি করে তুলতে এবার এই সমস্ত স্মারকের উপরেও আঘাত নেমে আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে চৌমুহানি পোস্ট অফিসের শহিদ মিনারটিকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। শোনা গিয়েছে, শহর থেকে কিছু দূরে অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে প্রতিস্থাপিত করা হবে এটি। কিন্তু এই পরিকল্পনাকে ঘিরে ইতিমধ্যে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন দুই দেশের মানুষই।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে আগরতলা শুধুই ভারতীয় সেনাদের ঘাঁটি ছিল না। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বহু মুক্তিযোদ্ধাও। এমনকি যুদ্ধের সময় যখন বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন, তখন ১৫ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল ত্রিপুরা। রাজ্যটির নিজের লোকসংখ্যাই ছিল তখন মাত্র ১৬ লক্ষ। তাই আগরতলা শহরের এই শহিদ মিনারকে ইতিহাসের দলিল মনে করেন অনেকেই। আজও প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসে মুক্তিযুদ্ধের ভারতীয় শহিদদের উদ্দেশ্য করে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। সরকারে এই সিদ্ধান্তে সেই ইতিহাসই কলঙ্কিত হল বলে দাবি তুলেছেন বিরোধী দলগুলি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও।
আগরতলা শহরের বহু মানুষ মনে করছেন, শহরজুড়ে যে সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে তাকে একটি ছোটো জায়গায় ঘিরে ফেললে গুরুত্ব অনেকটাই হ্রাস পাবে। মুক্তিযুদ্ধের, বিশেষ করে হিলি সীমান্ত যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি অ্যালবার্ট এক্কা পার্ক নির্মাণকে স্বাগত জানিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু ২৮ বর্গকিলোমিটার শহরের যাবতীয় স্মৃতিচিহ্ন ওই একটি পার্কে ঘিরে ফেলা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। এই নিয়ে সরকারের কাছে লিখিত প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছেন শহরের শিল্পী-সাহিত্যিক গোষ্ঠীর অনেকেই। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, যে স্মার্ট সিটিতে ইতিহাস বেমানান, তার আদৌ কতটা প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শাসকদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনী ও আর্মি অ্যাকাডেমির সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চৌমুহানি পোস্ট-অফিসের থেকে অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে এই মনুমেন্টের রক্ষণাবেক্ষণ আরও যত্ন সহকারে সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সরকারের উদ্যোগেই ৩ লক্ষ শিশু চুরি স্পেনে, যুক্ত ছিলেন চিকিৎসকরাও!