মাত্র বছরখানেক আগের কথা। তৈলখনি প্রকল্পকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইক্যুয়েডর। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোপে হারাতে চলেছিল আমাজনের ৫ লক্ষ একর বনভূমি। কিন্তু না, বাওরানি উপজাতির মানুষরা এই প্রকল্প মেনে নিতে পারেননি। সারা দেশজড়ে শুরু হয়েছিল তীব্র আন্দোলন। এমনকি ইক্যুয়েডরের আদালতেও পৌঁছে গিয়েছিল মামলা। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় অরণ্য-নিধন প্রকল্প। আর সেইসময়েই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠে এসেছিলেন এক উপজাতি মহিলা। তিনি নেমোন্টে নেনকিমো।
সম্প্রতি গোল্ডম্যান এনভার্মেন্টাল প্রাইজের প্রাপক হিসাবে উঠে এল নেনকিমোর নাম। ১৯৭০-এর দশকে অরণ্যে ঢাকা গ্রামে জন্ম নেনকিমোর। তথাকথিত নাগরিক জীবনের অভিজ্ঞতা প্রথমে হয়নি। ছোটো থেকেই দেখতেন শিকারী এবং সংগ্রাহক জীবন। বছর ২০ বয়সে এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে প্রথম তৈলখনি দেখা। ধোঁয়া আর দূষণে যেন দম বন্ধ লেগেছিল। আর তার থেকেও খারাপ লেগেছিল তথাকথিত নাগরিক জীবনের অভিজ্ঞতা।
আরও প্রায় ৩০ বছর পর যখন নিজের এলাকাতেই তৈলখনি তৈরির প্রকল্প শুরু হল, তখন চুপ থাকতে পারলেন না নেনকিমো। ইতিমধ্যে অবশ্য গ্রামবাসীদের অনুমতি আদায় করে নিয়েছে সরকার। কিন্তু নেনকিমো দাবি করলেন, তৈলখনি প্রকল্পের অভিঘাত সম্পর্কে তাঁদের জানানো হয়নি কিছুই। তাঁর প্রচার আন্দোলনে একে একে জোট বাঁধলেন বাওরানি উপজাতির মানুষরা। অবশেষে আইনি লড়াইয়েও জয় হল তাঁদেরই। সারা পৃথিবীর প্রকৃতি আন্দোলনের সামনে এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আর সেই আন্দোলনের স্বীকৃতিতেই এবার গোল্ডম্যান প্রাইজ তুলে দেওয়া হচ্ছে নেনকিমোর হাতে। নেনকিমো অবশ্য এখনও জানেন না, পুরস্কারের অর্থ তাঁর কোন কাজে লাগবে। তাঁদের তো অরণ্য আছে। অর্থের কোনো প্রয়োজনই নেই।
Powered by Froala Editor