ছত্তিশগড়ের এই গ্রামে ঘড়ির ঘোরে উল্টোদিকে!

‘সময় বহিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়’… হ্যাঁ, নিজের খেয়ালেই বয়ে চলেছে সময়। তাকে নিয়ন্ত্রণ করার সাধ্য নেই কারোর। বরং, উল্টোদিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের জীবনের নির্ধারিত সময় কমে আসছে প্রতিমুহূর্তে। তাত্ত্বিকভাবে এমনটা সত্যি হলেও, আমদের ঘড়ি জানান দেয় কতটা এগিয়ে গেল সময়। কিন্তু যদি এর ঠিক উল্টোটা হত? যদি ঘড়ির কাঁটা ঘুরত উল্টোদিকে? 

এমনটা অবাস্তব মনে হলেও, সত্যি। ভারতের বুকেই রয়েছে এমন এক গ্রাম যেখানে বিপরীতে প্রবাহিত হয় সময়ের ধারা। ঘড়ির কাঁটা (Clock Hands) ঘোরে প্রচলিত নিয়মের বিপরীতমুখে। দুপুর ১২টার পর ১টা নয়, বরং ১১টা বাজে সেই ঘড়িতে। ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) কোরবা জেলায় গেলে দেখা যাবে এমনি এক অদ্ভুত দৃশ্য। তাছাড়াও ছত্তিশগড়ের নানান অঞ্চলেই প্রচলিত রয়েছে এই বিশেষ ঘড়ি। 

ছত্তিশগড় তো বটেই, মধ্যভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল-জুড়ে ছড়িয়ে থাকা উপজাতিগুলির মধ্যে অন্যতম গোন্ড। মূলত, তাঁরাই ব্যবহার করে থাকেন এই ঘড়ি। গোন্ডদের আইন-কানুন, সমাজব্যবস্থা, অর্থনীতি— সবটাই একটু ভিন্ন রকমের। বলতে গেলে, ফৌজিদারি দণ্ডবিধি ছাড়া ভারতের আর কোনো প্রশাসনিক নিয়মই চলে না সেখানে। গোন্ড সমাজের সবটাই নিয়ন্ত্রিত হয় গ্রাম সভার মাধ্যমে। প্রচলিত নিয়মের বাইরে তাত্ত্বিক জীবনদর্শককেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় সেখানে। সেই সূত্র ধরেই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে সময়ের এই বিপরীতমুখী প্রবাহ। 

গোন্ডদের বিশ্বাস, জীবনের নির্ধারিত সময় ক্রমশ ছোটো হয়ে আসে। তাই দুপুর ১২টার পর তাঁদের ঘড়িতে সময় কমে দাঁড়ায় ১১টায়। পাশাপাশি চাঁদ পৃথিবীকে এবং পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে। সেটিকেই প্রমাণ ধরে নিয়েই এই ঘড়ি নির্মাণ করে গোন্ডরা। অভিমত, প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে এটিই সবচেয়ে আদর্শ ঘড়ি। তবে শুধু ঘড়ির ক্ষেত্রেই নয়, বিবাহের সময়েও অগ্নিকে সাক্ষী করে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতেই প্রদক্ষিণ করেন গোন্ডরা। 

আরও পড়ুন
ভাষাদিবসের প্রাক্কালেই মৃত্যু আরও একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী ভাষার

সবমিলিয়ে প্রায় দশ হাজারের বেশি পরিবারে ব্যবহৃত হয় এ ঘড়ি। গোন্ড ছাড়াও যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিপন্নপ্রায় ২৯টি সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাঁদের এই অদ্ভুত রীতি মনে করিয়ে দেয় আক্ষরিক অর্থেই ভারত বৈচিত্রের দেশ…

আরও পড়ুন
অরণ্য হারিয়ে ঠাঁই শহরে, বৈষম্যে জেরবার ব্রাজিলের প্রাচীন জনগোষ্ঠী

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
শিল্পকে হাতিয়ার করেই সভ্যতার সঙ্গে লড়াই ব্রাজিলের বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীর