২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল জাতীয় শিক্ষা নীতির নয়া বিজ্ঞপ্তি। তাতে জানানো হয়েছিল, অন্ততপক্ষে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদান শিশুদের মানসিক ও উপস্থিত বুদ্ধির বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে ক্লাসে উপস্থিতির হারও বৃদ্ধি পায়। এই নীতি অনুযায়ীই আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষাদানের বন্দোবস্ত করেছিল সরকার। তবে সীমিত ছিল উপলব্ধ ভাষার পরিমণ্ডল। বিশেষ করে উপেক্ষিত হয়েছিল উপজাতি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এবার তাদের জন্যই বিশেষ উদ্যোগ নিল ঝাড়খণ্ড (Jharkhand)। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর শিশুদের (Tribal Students) এবার থেকে পড়ানো হবে আদিবাসী ভাষা ও উপভাষাতেই।
ঝাড়খণ্ডের ছটি আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় ২৫০টির বেশ স্কুলে চালু হতে চলেছে এই বিশেষ প্রকল্প। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সেখানে পাঠদান করা হবে স্থানীয় আদিবাসী ভাষাতেই। পরবর্তীতে হিন্দি বা ইংরাজি মাধ্যমকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। ঝাড়খণ্ড শিক্ষা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কোনো অঞ্চলের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষাকেই প্রাধান্য দেবে বিদ্যালয়।
প্রাথমিকভাবে পরিসংখ্যানের নিরিখে বেছে নেওয়া হয়েছে মোট আটটি ভাষাকে। যার মধ্যে রয়েছে মুণ্ডারি, নাগপুরী, পাঁচপরগণিয়া, কুদুখ, খাদিয়া, খোর্থা, কুর্মালি এবং অলচিকি। যার মধ্যে অলচিকি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। সাঁওতাল পরগণার বহু স্কুলেই পড়ানো হচ্ছে এই ভাষায়। প্রকাশিত হয়েছে সম্পূর্ণ পৃথক পাঠ্যপুস্তক। পাঠক্রমে সংযুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সংস্কৃতিও।
একইভাবে বাকি ভাষাগুলির জন্যও গ্রন্থ অনুবাদ এবং বিশেষ শিক্ষা পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে বলেই জানাচ্ছে ঝাড়খণ্ড প্রশাসন। সেইসঙ্গে স্থানীয় উপভাষাগুলি সম্পর্কে শিক্ষকদেরও দেওয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ। অথবা, আঞ্চলিক ভাষাভাষীর মানুষদেরই নতুন করে নিয়োগ করা হবে শিক্ষকের পদে। ফলে, এই প্রকল্প চালু হতে এখনও সময় লাগবে বছর খানেক। উল্লেখ্য, ভারতে এই প্রথম কোনো রাজ্য প্রতিটি আদিবাসী ভাষার জন্য পৃথকভাবে শিক্ষা পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিল। যা আগামীদিনে মডেল হয়ে উঠতে পারে গোটা দেশের জন্যই…
Powered by Froala Editor