জঙ্গল রক্ষা করা তাঁদের কাজ। কিন্তু জঙ্গলের শমন হয়ে উঠলেন তাঁরাই। ওড়িশায় একদিনের মধ্যে বন দফতরের আধিকারিকরা কেটে ফেললেন সম্পূর্ণ একটি জঙ্গল। করোনা ভাইরাসের অবহেই কালাহান্ডি জেলায় একরাতের মধ্যে মুছে গেল ঐতিহ্যবাহী একটি গোটা অরণ্য।
কালাহান্ডি জেলার দারিংবাড়ি ব্লকের পিদাদমাহা গ্রাম। সেখানেই বসবাস স্থানীয় আদিবাসী উপজাতির। পাশাপাশি কেন্দু, মহুয়া, আমলা, কাঁঠাল, বনৌষধি গাছে গাছে ভরা জঙ্গল দীর্ঘদিন তাঁদের পাশেই মাথা তুলে বেঁচে ছিল এতদিন। কিন্তু ব্যবসায়িক বৃক্ষরোপণের জন্যই বনদপ্তরের কর্মীরা রাতের অন্ধকারেই শুরু করলেন নিধনযজ্ঞ। রাত থেকে পরদিন সকালের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেল বহুদিনের প্রাচীন বনভূমি। সাত থেকে আট একর জায়গা এখন ধূ ধূ প্রান্তর সেখানে। বাসস্থান হারালেন ৩২টি উপজাতি পরিবার। তাঁদের যাপন, জীবিকাও জড়িয়ে ছিল এই আঞ্চলিক বনভূমির সঙ্গে।
ঘটনার প্রতিবাদে সামিল হন দারিংবাড়ি ব্লকের উপজাতি মহিলারা এবং গ্রামসভার সদস্যরা। চলছে ধর্না। গ্রিন নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রফুল্ল সামন্তরাও যোগ দেন এই আন্দোলনে। ১৭ মে তিনি রাজ্যপালের কাছে দ্বারস্থ হন। চিঠিও দেওয়া হয় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কিন্তু নিরুত্তর রাজ্যপালও।
নীরবেই ধ্বংস করা হল জীববৈচিত্র্য। বনভূমির গন্ধ ঘেঁষা মানুষগুলোর থেকে কেড়ে নেওয়া বনের হল অধিকার। বন দফতরের এমন অমানবিক এবং অসাংবিধানিক পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আদৌ কি বিচার হবে কোনো? নাকি বনদপ্তরের এই ধ্বংসযজ্ঞ চলবে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতেও? সেই চিন্তাই ঘুম কেড়ে নিয়েছে অন্যান্য আদিবাসী গ্রামগুলির। কে বলতে পারে, হয়তো এমনই রাতের অন্ধকারেই কেড়ে নেওয়া হবে তাঁদের মাথার ছাদও! হাতিমুন্ডা গ্রামে ৫ একরের জঙ্গলে বসবাস ৯০টি পরিবারের। তাঁরাও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে। এতগুলি গাছের নৃশংস মৃত্যুতে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। ২০০৬-এর বনভূমি রক্ষা আইনের উপর তাঁরা ভরসা হারিয়েছেন প্রত্যেকেই...
ছবিঋণ- Indigenous Uncultivated Forest Foods
Powered by Froala Editor