চাই স্বধর্মের স্বীকৃতি, জনগণনা বয়কটের ডাক ঝাড়খণ্ডের ৩২টি উপজাতি সম্প্রদায়ের

আবার একটি জনগণনার বছর আসতে চলল। সরকারের প্রতিনিধি দল মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়ে সংগ্রহ করবে প্রয়োজনীয় তথ্য। আমরা জানি এই সব বিষয়ে সরকারকে সাহায্য করা প্রতিটা মানুষেরই কর্তব্য। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের ৩২টি উপজাতি সম্প্রদায় মিলিতভাবে স্থির করেছে, তাঁদের দাবি মানা না হলে তাঁরা জনগণনায় অংশ নেবেন না। তাঁদের দাবি কী? অতি ছোট্ট দাবি। ধর্মের তালিকায় তাঁরা কোনো মিথ্যে তথ্য দিতে রাজি নন। তাই হিন্দু মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ বা জৈন কোনোটাই লিখবেন না তাঁরা।

মুসলমান এবং খ্রিস্টান দুই ধর্মের জন্মই ভারতের মানচিত্রের বাইরে। অন্যদিকে বাকি ধর্মগুলির জন্ম হয়েছে আর্যদের ভারতে আসার পর। কিন্তু দেশের আরণ্যক উপজাতিগুলির বাস তারও আগে থেকে। এমনকি তাঁদের নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাসও গড়ে উঠেছিল। প্রচলিত কোনো নাম অবশ্য তার ছিল না। এমনকি নানা প্রান্তে এই ধর্মের পার্থক্যও দেখা যেত। কিন্তু তার মধ্যে সাদৃশ্যই ছিল বেশি। অন্যদিকে আর্য দর্শনের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে। যদিও ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের হিন্দু বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলেছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদও গড়ে উঠেছে।

দেশের নানা প্রান্তের আদিবাসী মানুষরা মিলিতভাবে তাঁদের ধর্মের নাম দিয়েছেন সারনা ধরম। তাঁদের দাবি তো ছিলই, তাছাড়া অনেক শিক্ষিত নাস্তিক মানুষও দাবি করছিলেন তাঁরা ধর্মের তালিকায় নিজেদের নাস্তিক বলেই পরিচয় দেবেন। আর এইসব দাবি মেনেই ২০১১ সালের জনগণনায় ঠিক করা হয় ধর্মের তালিকায় ‘আদার্স’ বলে একটি অপশন রাখা হবে। যদিও সেখানে বিস্তারিত লিখতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সারনা, ট্রাইবাল, পারসিক নাকি নাস্তিক অথবা অন্য কোনো ধর্মে বিশ্বাসী। কিন্তু সম্প্রতি জানা গিয়েছে ২০২১ সালের জনগণনার তালিকায় এই অপশনটি রাখা হবে না। আর এর ফলে প্রতিটা মানুষকেই হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন বা শিখ; কোনো একটি ধর্মের সঙ্গে নিজেকে সংশ্লিষ্ট ঘোষণা করতে হবে।

সরকারের এই পরিকল্পনার মধ্যে এক ধরনের হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের স্পষ্ট প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। শিক্ষাবিদ কারমা ওঁরাও মনে করছেন, সরকার ভেবেছে যেহেতু বাকি সমস্ত ধর্মের নির্দিষ্ট আরাধনা পদ্ধতি আছে তাই আদিবাসীরা হিন্দু ধর্মের তালিকাতেই নাম লেখাবেন। কিন্তু তাঁদের জেনে রাখা প্রয়োজন, আদিবাসীরা নিজেদের ন্যায্য অধিকারের লড়াইটা চিরকাল জিতে নিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের ৩২টি উপজাতি ইতিমধ্যে বিক্ষোভ শুরু করেছে। আর দাবি মানা না হলে আগামী দিনে অন্যান্য রাজ্যেও বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
দশম শ্রেণীতে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে ‘রেকর্ড’ আদিবাসী কিশোরীর

Powered by Froala Editor

Latest News See More