প্রতিটা মেয়েকেই একদিন যৌবনের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হয়। প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতা সবার কাছেই থাকে আকস্মিক। কিন্তু তার পরেও কি সম্যক শিক্ষা পায় সবাই? আমাদের দেশের বাস্তব দৃশ্য বলছে, অধিকাংশ মেয়েদেরই ঋতুস্রাবের দিনগুলো কাটে চরম গোপনীয়তায়। আর সেই গোপনীয়তা রক্ষা করতে গিয়ে মেনে চলা হয় না নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধিও। ফলে যৌনাঙ্গে সংক্রমণ কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অথচ এই একুশ শতকেই অধিকাংশ মেয়েই সেটাকে উপেক্ষা করে চলেছে। আর তার কারণ উপযুক্ত শিক্ষার অভাব।
সম্প্রতি অবশ্য বেশ কিছু সংস্থা ঋতুকালীন মহিলাদের স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা কর্মসূচি নিয়ে আসছে। তবে এর মধ্যে ওড়িশার ‘বড়া দিদি’ গোষ্ঠীর মহিলারা সত্যিই অন্যরকম। তাঁরা সকলেই আদিবাসী। আর সচেতনতার কাজটাও চালাচ্ছেন ওড়িশার মালকানগিরি জেলার আদিবাসী কিশোরীদের মধ্যেই। ২০১৯ সালে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই শুরু হয় কাজ। আর তারপর এখনও অবধি ৫ হাজারের বেশি কিশোরীর কাছে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতার পাঠ পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা।
এই স্বেচ্ছাসেবী দলটির মুখ্য সংগঠক জয়ন্তী বুরুদার কথায়, একসঙ্গে সবার সঙ্গে কথা বলতে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেউ মুখ খোলে না। তাই প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথোপকথনেই জোর দিয়েছেন তাঁরা। অবশ্য সেখানেও সদ্য ঋতুমতী কিশোরীরা যত সহজে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়, একটু বয়স্ক কিশোরীদের ক্ষেত্রে আর তেমনটা দেখা যায় না। তারাও তখন নিজেদের আড়াল করতে শুরু করে। তবে বারবার যোগাযোগ করার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পর্ক সহজ হয়ে আসে।
নিজেরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় ঋতুমতী মেতেদের সমস্যা সম্পর্কে তাঁদের ধারণা স্পষ্ট। তাঁরা জানেন, এই সময় মেয়েদের বাড়ির বাইরে একটা ছোট্ট ঝুপড়ির মধ্যে থাকতে দেওয়া হয়। নেহাৎ তেমন জায়গা না পাওয়া গেলে শুতে হয় বাড়ির বারান্দায়। ঋতুস্রাবের রক্তকে মনে করা হয় অপবিত্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিষ্কার কাপড় জোটে না তাঁদের। এমনকি কুঃসংস্কারের প্রভাবে সেইসব কাপড় খোলা রোদে শুকোতেও দেওয়া হয় না। স্যানিটারি ন্যাপকিন তো দূরের কথা। তবে ‘বড়া দিদি’ গোষ্ঠীর উদ্যোগে ক্রমশ সচেতন হচ্ছেন মালকানগিরি জেলার মানুষ। আর এই উদ্যোগ দেখে খুশি স্থানীয় প্রশাসনও। এই ছোট ছোট উদ্যোগগুলোই তো পারে আগামীদিনের চেহারাটা বদলে দিতে।
Powered by Froala Editor