“নানা ধরনের কঠিন রোগ তো রয়েছেই। তবে চিকিৎসকদের বোধহয় সবচেয়ে অসহায় অবস্থা হয় কোনো সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করতে গেলে। আজও সেই ১৫০ বছরের পুরনো অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশনই একমাত্র ভরসা।” বলছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা রোশনারা মিশ্র। তাঁর হাত ধরেই বাংলায় প্রথম সাপে কাটা রোগীদের জন্য ট্যাবলেট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। তিনি নিজে সফল না হলেও সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব হতে চলেছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই দেশের মধ্যে প্রথম এমন ওষুধের ট্রায়াল শুরু করতে চলেছে কলকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ।
কলকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কিছুদিন আগেই তৈরি হয়েছে একটি বিশেষ ট্যাবলেট। সাপে কাটা রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি এই ওষুধের নাম পিএলএ-২ ইনহিবিটার। সবকিছু ঠিক থাকলে পুজোর পরেই শুরু হয়ে যেতে পারে এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। সর্পবিশারদ ডঃ বিশাল সাঁতরা বলছিলেন, “এই ট্যাবলেট কিন্তু সাপের বিষের সম্পূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারে না। কিন্তু যে সমস্যায় ডাক্তাররা সবসময় পড়েন তা হল, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় অনেক দেরিতে। তখন আর কিছু করার থাকে না। এই ট্যাবলেট স্বীকৃতি পেলে সেই প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলানো যাবে।” তিনি জানালেন, সাপের বিষের মধ্যে থাকা পিএলএ-২ নামক কম্পাউন্ডটির বিরুদ্ধে কাজ করবে এই ওষুধ। ফলে ক্ষতস্থানে দ্রুত রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে অনেকটাই।
ইতিমধ্যে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। এখন শুধু রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এথিক্স কমিটির সবুজ সংকেত পাওয়ার অপেক্ষা। পুজোর মধ্যে সেই অনুমতিও পাওয়া যাবে বলেই আশা করছেন গবেষকরা। আর ট্রায়াল সফল হলে চিকিৎসার জগতে এক অন্য দিগন্ত খুলে যাবে বলেই মনে করছেন সকলে। তবে ট্যাবলেট আকারে এই ওষুধ পাওয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ব্যবহারের সম্ভাবনাও থেকে যায়। তবে এই প্রসঙ্গে রোশনারা মিশ্রর প্রতিক্রিয়া, “সেই সম্ভাবনা তো অ্যান্টিবায়োটিক সহ অনেক ওষুধের ক্ষেত্রেই থেকে যায়। তবে মানুষকে এর প্রয়োগ নিয়েও সচেতন থাকতেই হবে।” গ্রামবাংলায় সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা এখনও বেড়েই চলেছে। সারা পৃথিবীতে চিকিৎসার অভাবে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যাই সর্বাধিক। এই ওষুধ ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হলে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
প্রাণঘাতী সর্পবিষ থেকে তৈরি ‘সুপার গ্লু’, ৪৫ সেকেন্ডেই থামাবে রক্তপাত!