যিশুখ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর শরীরে একের পর এক পেরেক পুঁতে পুঁতে যন্ত্রণা দিয়েছিল রোমানরা। তার পরবর্তী ইতিহাস আমরা সবাই জানি। কিন্তু তা থেকে শিক্ষা পায়নি মানবসমাজ। গাছের গায়ে একের পর এক পেরেক পোঁতা হচ্ছে। আর তা থেকে ঝুলছে হোর্ডিং, বিজ্ঞাপন বোর্ড, ফ্লেক্স। গাছেদের মৃত্যুযন্ত্রণা নেই, নাকি মরে গেছে আমাদের বোধ-চেতনাই! গাছেদের রক্ত ঝরতে দেখি না, তাই আমরা একের পর এক গাছ কেটে ফেলতে পারি। আঘাতে আঘাতে তার ছাল-বাকল তুলে ফেলতে পারি৷ কারণ গাছ বোবা, গাছেদের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই। তারা কেবল দিতে জানে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।সবুজকে নৃশংস ভাবে ক্ষতবিক্ষত করার এই দৃশ্য দেখা গেল হাবড়া শহরে।
আরও পড়ুন
আমাজনকে পোড়াচ্ছি আমরাই
গাছ থেকে পেরেক তোলার পাশাপাশি, তাঁরা পথে প্ল্যাকার্ড হাতে নেমেছিলেন আমাজন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও। লেখা - পৃথিবীর ফুসফুস আমাজন ধ্বংস বন্ধ করো।' আমাজনের আগুন এখনও নেভেনি। হয়তো কিছুই করার নেই, কিন্তু এ-বিষয়ে সাধারণ মানুষের উদাসীনতাও মেনে নেওয়া যায় না। গাছের সঙ্গে মানবসভ্যতার সম্পর্ক চিরন্তন। যশোর রোডের গাছগুলি কি আমাজন অরণ্যেরই রূপক হয়ে এল তাঁদের কাছে? সমস্ত বৃক্ষজাতির প্রতিনিধি?
স্থানীয় প্রশাসন এসব নিয়ে ভাবতে নারাজ। তারা চায় মানব সভ্যতার উন্নয়ন৷ যশোর রোডের এই গাছগুলিকে পেরেক মুক্ত করার জন্য প্রতিবাদে নেমেছেন হাবড়ার 'সবুজ যোদ্ধা'রা। গতকাল যশোর রোডের প্রায় ৩৫ টি গাছ থেকে পেরেক বার করেন পরিবেশ কর্মীরা। এর আগেও বিপুল গাছ কাটা নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন তাপসী, অনির্বাণরা। প্রাচীন বট, মেহগনি গাছের ওপর ঝুলতে থাকে কোচিং ক্লাসের বিজ্ঞাপন।
সবুজ যোদ্ধাদেরই একজন অনির্বাণ দাসের মতে, ‘যে ব্যক্তি প্রাইভেট টিউটর হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন এখনও তিনি সেই ভূমিকায় আছে কিনা সন্দেহ। অথচ তাঁর সেই প্লাস্টিকে লেখা বিজ্ঞাপন পেরেক সমেত গাছেই রয়ে গিয়েছে।' আর তাপসী আইচের কথায়, ‘জানি না কবে সব পেরেক থেকে গাছগুলিকে আমরা মুক্তি দিতে পারব। একেকটি গাছ থেকে সব পেরেক বার করতে গেলে ন্যূনতম ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগবে।' তাঁদের বিশ্বাস, এই কাজে ভরসা আগামী প্রজন্ম। স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে এই কাজে আগামী দিনে চালিয়ে যেতে চান 'সবুজ যোদ্ধা'রা।
ছবি ঋণ - শৌভিক গুহ