সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অবলুপ্তির পিছনে দায়ী গাছের শিকড়!

আজ থেকে ৪০ কোটি বছর আগের কথা। ডেভোনিয়ান যুগে (Devonian Age) ধারাবাহিক গণ-অবলুপ্তির সম্মুখীন হয়েছিল পৃথিবী। তবে স্থলজ প্রাণীরা নয়, বরং উজাড় হয়ে গিয়েছিল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটা বড়ো অংশ। প্রাণ হারিয়েছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি সামুদ্রিক প্রজাতি। কিন্তু কী কারণে এই গণঅবলুপ্তির (Mass Extinction) সাক্ষী হয়েছিল সমুদ্রজগৎ?

গাছ। হ্যাঁ, উত্তরটা একটু অবাক করার মতোই। আজ যেখানে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণের কথা প্রচার করে চলেছেন পরিবেশবিদরা, সেই উদ্ভিদের বিবর্তনই একসময় বদলে দিয়েছিল পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের পরিমণ্ডল। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়, পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায়।

ডেভোনিয়ান যুগের আগে পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে যে-সমস্ত গাছের অস্তিত্ব ছিল, তাদের মূল বা শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করত না। পাশাপাশি সেগুলি জন্মাত মূলত জলজ পরিবেশেই। ৩৬ থেকে ৪০ কোটি বছর আগে ব্যাপকভাবে বদলে যায় গাছের প্রকৃতি ও চরিত্র। যার অন্যতম কারণ গাছের মূলের বিবর্তন। আগের তুলনায় গাছের শিকড় দৃঢ়, শক্ত ও দীর্ঘ আকার ধারণ করায়, জলজ পরিবেশের ওপর নির্ভরতা কমে গাছের। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও খনিজ মাটির তলা থেকেই আহরণ করতে শুরু করে উদ্ভিদ। এই সময়কার জীবাশ্মের বিশ্লেষণে গবেষকরা লক্ষ করেন, হ্রদ ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলেই সে-সময় বেশি প্রাধান্য দেখা যেত বড়ো বৃক্ষের। 

গাছের এই বিবর্তনের কারণেই সামুদ্রিক ও জলজ পরিবেশে ক্রমশ বাড়তে থাকে ফসফরাসের মাত্রা। একটা সময় যা পুষ্টি হিসাবে সরাসরি শোষণ করত জলজ উদ্ভিদরা। পাশাপাশি এই মাত্রাতিরিক্ত ফরফরাসের উপস্থিতি ত্বরান্বিত করে শৈবালের বংশবৃদ্ধিকে। দ্রুত শ্যাওলায় ছেয়ে যায় জলজ পরিবেশ। কমে যায় জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণও। ফলে, সবমিলিয়ে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনধারণ। 

কিছুদিন আগের কথা। একাধিক সংবাদপত্রে নজর কেড়ে নিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন এলাকায় মাছের গণ-মৃত্যুর ঘটনা। গবেষণায় উঠে এসেছিল শৈবালের বৃদ্ধি এবং অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পাওয়াই তার অন্যতম কারণ। আজ থেকে ৪০ কোটি বছর আগেও এই একই ঘটনা ভিন্নভাবে আঘাত হেনেছিল প্রাণীজগতে, তা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল জিএসএ বুলেটিনে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র…

Powered by Froala Editor

More From Author See More