প্রয়াত জাদুকর প্রিন্স শীলের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ, ‘ব্যতিক্রমী’ স্বাধীনতা দিবসের সাক্ষী রইল কলকাতা

দুঃসময়ের দিনগুলোকে ম্যাজিক করে বদলে দেওয়া যাবে কি? না, অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা ম্যাজিকের নেই। কিন্তু করোনা এবং আমফানে বিধ্বস্ত সমাজের পাশে এসে দাঁড়ানোর দায়বদ্ধতা তো থেকেই যায় প্রত্যেকের। আর সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই দেশের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানকে একটু অন্যভাবে দেখতে চাইলেন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ম্যাজিক অ্যাসোসিয়েটসের সদস্যরা। ফিমার সঙ্গে এই উদ্যোগে যুক্ত ছিল প্রহরও। আর এভাবেই পার্ক স্ট্রিটের আইসিসিআর প্রাঙ্গণে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান কাটল বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে।

গত মাসের ৮ তারিখ প্রয়াত হয়েছেন জাদুকর প্রিন্স শীল। তাঁর স্মৃতিতেই এইদিন আজ রোপণ করা হল একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। ফিমার সেক্রেটারি স্যান্ড আর্টিস্ট কৌশিকের কথায়, “ম্যাজিকের পাশাপাশি বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতেন প্রিন্স শীল। আর তাঁর স্মৃতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানকেও সমস্ত কচিকাঁচার উদ্দেশ্যে নিবেদন করতেই অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছি ‘সবুজ পাতারা’। তাছাড়া আমফান বিধ্বস্ত সময়ে গাছ লাগানো তো ভীষণভাবে দরকার।”

১৯৬৯ সালে পেশাদার জাদুকর হিসেবে আত্মপ্রকাশ পার্ক স্ট্রিটের বিখ্যাত নাইট ক্লাব ট্রিঙ্কাসএ তখনকার দিনের অভাবনীয় ৭৫০ টাকার মাসিক চুক্তির বিনিময়ে। তখন সাধারণ মানুষ তাঁর ম্যাজিকের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ম্যাজিকের সাধনাকে সেখানেই থেমে যেতে দেননি তিনি। ক্রমশ নানা ধরনের উদ্ভাবনী ম্যাজিকের মাধ্যমে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সমস্ত পৃথিবীতে। ম্যাজিকপ্রেমী এমন কোনো মানুষ নেই যিনি তাঁর ‘বুলেট ক্যাচিং’ শোয়ের সঙ্গে পরিচিত নন। ৫১ বছরের ম্যাজিক জীবনে পেয়েছেন পি. সি. সরকার পুরস্কার সহ নানা উল্লেখযোগ্য সম্মান। প্রিন্স শীল মনে করতেন ম্যাজিকের উৎস আছে এই ভারতেই। আর তাই তার ইতিহাস খুঁজলে পাওয়া যাবে নানা অমূল্য কৌশল। সেইসব কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি নিজের উদ্ভাবনের পেটেন্ট নিয়েছেন নিয়ম মেনে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র তিনিই ইংলিশ পেটেন্টের অধিকারী ছিলেন।

আরও পড়ুন
আষাঢ়ের প্রথম দিনে ‘গেরিলা গার্ডেনিং’, উপমহাদেশ জুড়ে বৃক্ষরোপণ একদল গাছপাগলের

এমন একজন মানুষের স্মৃতিকে সহজে মুছে যেতে দিতে রাজি নন প্রহর এবং ফিমার সদস্যরা। আর সেটা কোনো নির্জীব স্থাপত্যে নয়, বরং যতদিন ওই কৃষ্ণচূড়া গাছ বাঁচবে তার সঙ্গে বেঁচে থাকবেন অমর জাদুকরও। অভিনব এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাংসদ তথা অভিনেতা দেব। তাঁর সাহায্য ছাড়া অনেক কাজেই জটিলতার মুখে পড়তে হত বলে মনে করছেন স্যান্ড আর্টিস্ট কৌশিক।

আরও পড়ুন
বৃক্ষরোপণ করবেন লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকরা, বিকল্প জীবিকার পরিকল্পনা পাকিস্তান সরকারের

আরও পড়ুন
বৃক্ষচ্ছেদন নয় আমাজনে, আইনি জয় অরণ্যের আদিবাসীদের

করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প জগতের অন্য অনেক মাধ্যমের মতোই সংকটে পড়েছে ম্যাজিকও। এদেশে অনলাইন ম্যাজিকের ধারণাও প্রথম নিয়ে আসে ফিমা। প্রহরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় অনলাইন ম্যাজিক অনুষ্ঠান ‘ম্যাজিক চলুক’। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের সীমানা ছাড়িয়ে জাদুকরদের বারবার পৌঁছে যেতেই হয় দর্শকের সামনে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই কাজটা সম্ভব না হলেও ঘরবন্দি জীবনে হাঁপিয়ে উঠছিলেন ম্যাজিশিয়ানরাও। সেখানে যদি একটু খোলা হাওয়ার স্পর্শ এনে দিতে পারে সবুজ পাতারা, তাহলে তার থেকে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। দুঃসময়ের মেঘ একদিন ঠিক কেটে যাবে। ম্যাজিক করে নয়, কাটবে বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের চেষ্টার ফলেই। কিন্তু এর মধ্যে ম্যাজিককে হার্যেক যেতে দেওয়া যাবে না। তাই এর মধ্যেও ‘ম্যাজিক চলুক’, যেভাবে চলছে।

Powered by Froala Editor