পরিবেশ বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ, বৃক্ষ আলিঙ্গনের প্রতিযোগিতা স্কটল্যান্ডে

১৯৭৩ সাল। এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছিল উত্তরাখণ্ড। বননিধন আটকাতে সন্তানস্নেহে অরণ্যের সমস্ত গাছকে জড়িয়ে ধরেছিলেন গ্রামের মহিলারা। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে চিপকো আন্দোলন নিয়ে। শুধু ভারতই নয়, সুন্দরলাল বহুগুণার নেতৃত্বে এই আন্দোলন সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা বিশ্বেই। ভারতের পর এই একই ধরনের আন্দোলন দেখা গিয়েছিল আফ্রিকা এবং নেদারল্যান্ডসেও। এবার বৃক্ষচ্ছেদন সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে ফের চিপকোর দ্বারস্থ হল স্কটল্যান্ড (Scotland)।

না, এবার কোনো আন্দোলন বা প্রতিবাদ নয়। বরং, মানুষকে গাছের উপকারিতা ও বননিধন সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিশেষ প্রতিযোগিতা আয়োজিত হল স্কটল্যান্ডে। ‘স্কটিশ ট্রি হাগিং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ’ (Tree Hugging World Championship)। হ্যাঁ, বৃক্ষ আলিঙ্গন প্রতিযোগিতা। গত সপ্তাহে স্কটল্যান্ডের লোচাবেরের মরভার্ন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ‘দারাচ সোশ্যাল ক্রাফট’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তাছাড়াও ফিনল্যান্ডের একটি পরিবেশ সংস্থাও জুড়ে ছিল এই আয়োজনের সঙ্গে। 

অংশগ্রহণকারীদের জন্য মূলত তিনটি বিভাগ রেখেছিলেন আয়োজকরা— ফ্রিস্টাইল, স্পিড হাগিং এবং ডেডিকেশন। প্রথম অর্থাৎ ফ্রিস্টাইল বিভাগে প্রাধান্য দেওয়া হয় গাছকে আলিঙ্গনের সৃজনশীলতার ওপর। দ্বিতীয় বিভাগের খেলাটা ছিল একটু অন্যরকম। এক মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক গাছকে আলিঙ্গন করাই ছিল প্রতিযোগীদের চ্যালেঞ্জ। তৃতীয় বিভাগেও সময়সীমা ছিল এক মিনিট। তবে শুধু আলিঙ্গনই নয়, গাছের প্রতি ভালোবাসা, অভিপ্রায় এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর ভিত্তি করেই পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে প্রতিযোগীদের। দু’দিন ব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের প্রায় ২৫ জন প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর তকমা পান স্কটল্যান্ডের স্থানীয় বাসিন্দা আলাসদাইর ফার্থ। 

তবে শুধু বৃক্ষচ্ছেদন রুখতেই এমন প্রতিযোগিতা নয়। আয়োজকরা জানাচ্ছেন, গাছই মানুষের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর সময়ে দাঁড়িয়ে যেমন বৃক্ষ দূষণের থেকে বাঁচাচ্ছে আমাদের সভ্যতাকে, তেমনই মানুষের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার ক্ষেত্রেও সহায় হয়ে দাঁড়াতে পারে গাছ। হ্যাঁ, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, স্পেন-সহ একাধিক দেশেই শুরু হয়েছে ফরেস্ট থেরাপি। অনেকটা মিউজিক থেরাপির মতোই অরণ্য কিংবা গাছের সংসর্গ উপশম হয়ে দাঁড়াতে পারে মানসিক ও শারীরিক সমস্যার। প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়েই বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছেন ইউরোপীয় পরিবেশপ্রেমীরা…

Powered by Froala Editor