কথায় আছে ‘গল্পের গরু গাছে চড়ে’। বাস্তবে তা না হলেও, গরুর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছাগল (Goat) সম্ভব করে দেখিয়েছে এমনটাই। হ্যাঁ, শাখা-প্রশাখা বেয়ে দিব্যি গাছের মগডালে উঠে পড়ছে ছাগল। প্রকাণ্ড এক মহীরুহের ডালে দাঁড়িয়ে ফল খাচ্ছে ছাগল—বেশ কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল হয়েছিল এই ছবি। অনেকে ভেবেছিলেন, এ হয়তো ফটোশপের কারিকুরি। তবে সেই ধারণা একেবারেই ভুল।
আমাদের এই দৃশ্য অস্বাভাবিক লাগলেও, মরক্কোতে (Morocco) এটাই অতি চেনা ছবি। হ্যাঁ, সেখানেই দেখা মেলে এই দাপুটে গাছে চড়া চতুষ্পদের। তাও যে-সে গাছ নয়। খোদ আরগানিয়া বা আরগান গাছের ডালে। যার সারা গায়ে তীক্ষ্ণ কাঁটার উপস্থিতি দূরে রাখে মানুষকেও। কিন্তু রক্তপাত সত্ত্বেও হঠাৎ মাটি ছেড়ে গাছে চড়ে কেন এই তৃণভোজীরা?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ফিরে যাওয়া যাক মরক্কোর ভূপ্রকৃতির দিকে। মরক্কোর শুষ্ক ও পাথুরে প্রান্তরে সাধারণত যে-ধরনের ঘাস জন্মায়, তাতে জলের পরিমাণ থাকে খুবই কম। সেদিক থেকে বিনস-গোত্রীয় আরগানিয়ার ফল অনেকটাই সুস্বাদু, তাতে জলের পরিমাণও থাকে বেশি। সবমিলিয়ে বদলে গেলে, মুখরোচক ভুঁড়িভোজের জন্যই দস্যি ছেলের মতো গাছে চড়ে মরক্কোর ছাগলরা। তাছাড়া এই ফল কেবলমাত্র পাওয়া যায় গ্রীষ্ম থেকে শরতের আগে পর্যন্ত। বছরের বাকি সময় ঘাস খেয়ে কাটানোর পর, এই ফল তাদের কাছে একপ্রকার স্বাদবদলই বটে।
প্রসাধনীই হোক কিংবা খাবার প্রক্রিয়াকরণ— নানান ক্ষেত্রেই আরগান গাছের এই ফল এক কথায় দুর্মূল্য সম্পদ। আরগানের তেল যেমন খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, তেমনই তা দিয়ে তৈরি হয় একাধিক প্রসাধনী। কিন্তু তা সত্ত্বেও মরক্কোর কৃষকরা, খুব একটা বাধা দেয় না দস্যি ছাগলের এই ‘ছাগলামি’-তে। বরং, তাদের উৎসাহ দেন বলা চলে। তার কারণটাও খুব স্পষ্ট। আরগান তেল তৈরিতে মূলত ব্যবহৃত হয় ফলের বীজ। মরক্কান ছাগল এই ফল খেলেও হজম করতে পারে না তার বীজ। হয় তা চেবানোর সময় মাটিতে ফেলে দেয়, নয় তা প্রকৃতিতে ফিরে দেয় মলত্যাগের মাধ্যমে। সেখান থেকেই বীজ সংগ্রহ করেন কৃষকরা। ছাগলের পৌষ্টিকতন্ত্রের প্রক্রিয়াকরণে নরম হয়ে যাওয়া এই বীজ থেকে তেল উৎপাদন আরও সহজ হয়ে যায় কৃষকদের কাছে।
আরও পড়ুন
এশিয়াটিক চিতার পর ভারতীয় ধূসর নেকড়ে, অবলুপ্তির প্রমাদ গুনছে প্রাচীনতম প্রজাতি
পাশাপাশি বর্তমানে এই ছাগলরাই হয়ে উঠেছে মরক্কোর অন্যতম তারকা। হ্যাঁ, তারকাই বটে। তাদের দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে দক্ষিণ মরক্কোর মারাকেচের সোস-মাসা-ড্রা অঞ্চলে ভিড় জমান হাজার হাজার পর্যটক। তাতে আখেরে লাভ হয় কৃষকদেরই। ‘গল্পের গরু’-দের ছবি তোলার অনুমতি পেতেও ভালো অঙ্কের টাকা দিতে হয় কৃষকদের। সবমিলিয়ে তাদের ‘ছাগলামি’ যে মরক্কোর অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে, তাতে আর সন্দেহ কীসের?
আরও পড়ুন
দিঘা এবং কেরলে আবিষ্কৃত হল নতুন প্রজাতির ঈল
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মানুষ ছাড়াও হাসতে অভ্যস্ত ৬৫টি প্রজাতির প্রাণী! জানাচ্ছে গবেষণা