অনেকটা যেন ট্রাকের আদলে তৈরি একটি গাড়ি। তার গায়ের ওপর সবুজ রং দিয়ে লেখা রয়েছে ‘অ্যাম্বুলেন্স’। মাথার ওপরে নীলের বদলে সবুজ আলো। অ্যাম্বুলেন্সের এমন চেহারা নজরে পড়লে খানিকটা চমকে উঠতেই হয়। ব্যাপার কী? চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলিত সব নীতি উল্টে গেল একদিনেই? না, বিষয়টা তেমন নয়। আসলে এই অ্যাম্বুলেন্স মানুষের জন্য নয়। বরং, তা গাছেদের। শহরের বুকে বৃক্ষরোপণ এবং গাছেদের প্রাণ বাঁচাতে এমনই অভিনব উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি বন মহোৎসব সপ্তাহ উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে চালু করা হয় এই ট্রি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। উদ্বোধন করেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০১৯ সালে প্রথম এই ধরনের উদ্যোগ নেয় চেন্নাই। তারপর পাঞ্জাব এবং পন্ডিচেরিতেও চালু করা হয় ট্রি অ্যাম্বুলেন। এবার সেই তালিকায় নতুন সদস্য হিসাবে যুক্ত হল পশ্চিমবঙ্গের নাম।
মূলত গাছের স্থানান্তর ও প্রতিস্থাপনের কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ রাজ্যের। গত বছর আমফানে গোটা কলকাতা জুড়ে উপড়ে গিয়েছিল অসংখ্য গাছ। চলতি বছরে সেই মাত্রায় না হলেও, বেশ ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে গেছে ইয়াসও। তাছাড়াও, কালবৈশাখী ঝড়েও বহু গাছ উপড়ে যায় শিকড় সমেত। সেই সমস্ত বৃক্ষদেরই স্থানান্তরিত করে নতুনভাবে রোপণ করবে এই অ্যাম্বুলেন্স।
তবে শুধু গাছ স্থানান্তরই নয়, বরং গাছের পরিচর্যা এবং চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের একটি দল সবসময় হাজির থাকবেন এই অ্যাম্বুলেন্সে। তাঁদের প্রধান কাজ হবে গাছের গায়ে আটকানো বিভিন্ন ফেস্টুন, লিফলেট, পেরেক ইত্যাদি খুলে ফেলা। সেইসঙ্গে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পোকা আক্রান্ত গাছগুলির পরিচর্যা করা। অ্যাম্বুলেন্সেই মজুত থাকবে সার, স্প্রে, গাছের ওষুধ। চাইলে সাধারণ মানুষও অর্থের বিনিময়ে সেসব কিনতে পারেন এই অ্যাম্বুলেন্স থেকেই। সংগ্রহ করতে পারেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারাও।
আরও পড়ুন
দিল্লিতে মেট্রো সম্প্রসারণ, কাটা পড়ছে সহস্রাধিক গাছ
অন্যদিকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই অ্যাম্বুলেন্স নিয়েই হাজির হবেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা। বৃক্ষরোপণ ও গাছের পরিচর্যা বিষয়ে আয়োজিত হবে ভ্রাম্যমাণ সচেতনতামূলক কর্মশালা। এক কথায়, শহরের ভবিষ্যৎ ল্যান্ডস্কেপটাকেই বদলে দিতে চলেছে এই অ্যাম্বুলেন্স। এখন দেখার শহর ও শহরতলিকে কত দ্রুত সবুজতর করে তুলতে পারে রাজ্যের এই উদ্যোগ…
আরও পড়ুন
রাতারাতি উজাড় সহস্রাধিক গাছ, আরাবল্লী-কাণ্ডে সরব পরিবেশকর্মীরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
উপড়ানো গাছ পুনর্বাসনের জন্য ‘কাঁধে’ তুলে নিলেন গ্রামবাসীরাই!