সন্ধে নামলেই আলোয় সেজে ওঠে গোরস্থান, আইসল্যান্ডের ‘বরফচাপা’ ঐতিহ্য

সাধারণত সন্ধের পরেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে যে কোনো সমাধিস্থলে। বিরাজ করে শুনশান স্তব্ধতা। তবে আইসল্যান্ডে গেলে একেবারে অন্য ছবি দেখা যাবে। ডিসেম্বরের কয়েক সপ্তাহ ধরেই আলোয় আলোয় সেজে ওঠে আইসল্যান্ডের সমাধিক্ষেত্র। বিশেষ করে রেজকাজিকের লাগাফেলস্কির্জা গির্জায়। হঠাৎ করে খ্রিস্টমাসের আগে-পরের সময়ে এইসব কবরস্থানে চলে গেলেও, বিন্দুমাত্র দুঃখের আভাস পাবেন না। বরং পাবেন উৎসবের আমেজ।

আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে শুরু হয়েছিল এই প্রথার। মনে করা হয় সময়টা ছিল ১৮৩৩ সাল। হোলাভাল্লার্গারদুর গির্জার সমাধিক্ষেত্রকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল মোমের আলোয়। চারিদিক বরফে সাদায় সাদা। তাঁর মধ্যে মাথা উঁচু করে রয়েছে ক্রস, সমাধিফলক— এপিটাফ। আর তার খাঁজে খাঁজেই মোমবাতি।

ধীরে ধীরে সেই রীতিই আইসল্যান্ডের অধিকাংশ জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। শতাব্দী পেরিয়ে এসেও আজ যা অমলিন। ইউলেটাইড মরশুমে আলোর মাধ্যমে স্মৃতিফলক সাজানো আইসল্যান্ডের সংস্কৃতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। জমায়েত হন পরিবারের লোকজন, আত্মীয়রা। মৃত প্রিয়জনদের প্রতি জানানো হয় শ্রদ্ধা। তবে বেদনায় ভেঙে পড়া নয় বরং এই দিনগুলোয় তাঁদের সঙ্গেই আনন্দ ভাগ করে নেন পরিবারের সদস্যরা।

বছর পেরিয়েছে। এগিয়েছে প্রযুক্তিও। আজ তাই মোমবাতি, প্রদীপের পাশাপাশি চল এসেছে বৈদ্যুতিন বিভিন্ন আলোর। আর সেই আলোতেই ঝলমল করে আইসল্যান্ডের সমাধিক্ষেত্রগুলি। হাজারো রঙ খেলা করে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় তুষারপাতের মধ্যে। উত্তরমেরু ঘেঁষা আইসল্যান্ডে এমনিতেই দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হয়। ডিসেম্বরের আরও ছোটো হয়ে আসে সময়সীমা। আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর রাত জুড়েই চলতে থাকে এই আলোর খেলা। আইসল্যান্ডের এই অলৌকিক দৃশ্য দেখতেই প্রতিবছর হাজির হন হাজার হাজার পর্যটক। এমনকি শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নিষিদ্ধ হয় গাড়ির পার্কিংও। আসলে এই দৃশ্য না দেখতে পাওয়ার মানে তো একটা দেশ, তার সংস্কৃতিকে চিনতে না পারা। তাই বিশেষ খ্রিস্টমাসের সময়ই পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ওঠে রহস্যময়ী আইসল্যান্ড...

আরও পড়ুন
গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে ১০০০ কিমি দীর্ঘ নদী!

Powered by Froala Editor

More From Author See More