প্রতিবছরেই কয়েক হাজার ইউরোপীয় নগরবাসীর প্রাণ কাড়ছে বায়ুদূষণ। এই বিষয়ে সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল গবেষণা। মূলত দুটি দূষককেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আশঙ্কার মাত্রার ওপর নির্ভর করে প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলির একটি তালিকাও প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। সেখানে চিহ্নিত করা হয়েছে ইউরোপের ৮০০টির বেশি শহরকে।
‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। সেখানে উল্লেখ করা হয়, অতিবিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এবং মাইক্রোস্কোপিক পার্টিকল— যেমন ধোঁয়া, ধূলিকণা এবং ভাসমান ছাইয়ের কারণে অকালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন মানুষ। মূলত গাড়ি এবং কলকারাখানার নিষ্কাশনের মাধ্যমেই বায়ুতে মিশছে এই দূষকগুলি। আর এই দূষণের হটস্পট হয়ে উঠেছে ইউরোপের অন্যতম বাণিজ্যনগরী এবং শিল্পাঞ্চলগুলি।
বায়ুতে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের উপস্থিতির নিরিখে শীর্ষস্থানে রয়েছে মাদ্রিদ। তারপরেই রয়েছে তুরিন, অ্যান্টওয়ার্প, প্যারিস এবং মিলান। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক মৃত্যুর ৭ শতাংশের পিছনে দায়ী এই নিঃশব্দ ঘাতক। অন্যদিকে ইতালির পো ভ্যালি, দক্ষিণ পোল্যান্ড এবং পূর্ব চেক প্রজাতন্ত্রের বেশ কিছু শহরে মৃত্যুর অন্যতম মাইক্রো-পার্টিকলের কারণে বায়ুদূষণ। শিল্পের পাশাপাশি গৃহস্থলিতে উত্তাপের জন্য কয়লা ও কাঠের দহনও যথেষ্টভাবে দায়ী এই দূষণের জন্য।
তবে আশঙ্কার বিষয় এই দূষণের অধিকাংশটাই ধরা পড়ে না স্বাভাবিক গণনায়। যা আরও বাড়িয়ে দেয় মৃত্যুর ঝুঁকি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সব মিলিয়ে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এই ধরণের দূষণের জন্য। তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এই মৃত্যুর পরিমাণ কমানো সম্ভব প্রায় পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি। মানবাধিকারের কথা বিচার করেই প্রতিটি ইউরোপীয় দেশের প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন গবেষণার শীর্ষস্থানীয় লেখক মার্ক নিউয়েনহুইজেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেও অনলাইন দূষণ পর্যবেক্ষণের একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন তাঁরা। তাতে সময়ের নিরিখে প্রতি শহরের দূষণের পরিমাণ দেখা যাবে ঘরে বসেই। তবে ক্রমবর্ধমান এই দূষণ থেকে পরিত্রাণ পেতে কতটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবে বিভিন্ন দেশের প্রশাসন, তা নিয়ে থেকেই যাচ্ছে সংশয়...
Powered by Froala Editor