৭৪ বছর পর পুনর্মিলন, দেশভাগে ‘হারিয়ে’ যাওয়া ভাইকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধ

আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত দশক আগের কথা। বছর ছয়েকের ছোট্ট ভাইকে নিয়ে দু’দিনের জন্য মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁর মা। আর তিনি থেকে গিয়েছিলেন বাবার কাছে। কে আর জানত সেটাই মা আর ভাইকে দেখার শেষ স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে তাঁর জীবনে? 

এমনটাই ঘটেছিল পাকিস্তানের ফয়সলাবাদের নিকটবর্তী বগুড়ার বাসিন্দা সিদ্দিকের সঙ্গে। অবশ্য তখনও জন্ম নেয়নি পাকিস্তান। দেশ বলতে তখন অখণ্ড ভারতবর্ষ। তবে তাকে দ্বিবিভক্ত (Partition) করার কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে জোরকদমে। ঠিক সেই সময়ই অধুনা ভারতের পাঞ্জাবে (Punjab) মামার বাড়িতে এসে আটকে পড়েছিলেন সিদ্দিকের মা ও ভাই। না, ফেরা হয়নি আর। দেশভাগকে কেন্দ্র করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে হিংস্রতা। পরবর্তীতে সিদ্দিক ও তাঁর ভাই হাবিব হয়ে ওঠেন দুটি পৃথক দেশের নাগরিক।

তবে সেই কি শেষ দেখা? সম্প্রতি, কর্তারপুর সাহেব করিডোরে চোখের জলেই পুনর্মিলন হল দুই ভাইয়ের। ৭৪ বছর পর ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন সিদ্দিক। দুই ভাইয়ের আলিঙ্গনের আবেগঘন মুহূর্তের ভিডিও সম্প্রতি সাড়া ফেলে দিয়েছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়। কিন্তু কীভাবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সম্ভব হল দুই ভাইয়ের পুনর্মিলন? 

এর নেপথ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পাঞ্জাবি পারচার’। বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশভাগের শিকার হওয়া মানুষদের, তাঁদের প্রিয়জন ও হারানো পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। বিশেষভাবে যাঁদের বিদেশভ্রমণের সামর্থ্য নেই, তাঁদেরই এই পরিষেবা দিচ্ছে ‘পাঞ্জাব পারচার’। অবশ্য, সেটাও বেশ দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। দুই দেশের প্রশাসনের অনুমতি আদায় করতেই লেগে যায় বেশ খানিকটা সময়। দেশভাগের সাক্ষী ছিলেন যাঁরা, তাঁদের বয়সও বর্তমানে কম নয়। ফলে, সকলের ভাগ্যে সেই সুযোগও জোটে না। 

তবে ২০১৯ সালে কর্তারপুর করিডোর উদ্বোধনের পর অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে পাঞ্জাবের এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাধারণ মানুষের কাছে পুনর্মিলন ‘পরিষেবা’ পৌঁছে দেওয়ার কাজ। গত বছর নভেম্বর মাসে তাঁদের হাত ধরেই সাক্ষাৎ হয়েছিল দুই বন্ধুর। তাঁরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন দেশভাগের সময়েই। 

দীর্ঘ ১৯০ বছরের লড়াই, বিপ্লব, আন্দোলনের পর ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা মিলেছিল ঠিকই। কিন্তু দেশের বুকের ওপর বসে গিয়েছিল কাঁটাতারের দাগ। রক্তক্ষয়ও কম হয়নি। বিশেষত সেই টালমাটাল পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন পাঞ্জাব ও বাংলার মানুষেরা। কেউ হারিয়েছেন নিজের ভিটেমাটি, কেউ আবার প্রিয়জনদের। সাড়ে সাত দশক পেরিয়ে আজও দগদগে হয়ে রয়েছে সেই ক্ষতচিহ্ন। সেই ক্ষতেই যেন খানিকটা প্রলেপ দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাঞ্জাবের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি…

Powered by Froala Editor

More From Author See More

Latest News See More